বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। সকল প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার এবং কোটি কোটি দরুদ ও সালাম অবতীর্ন হোক নবীকূলসম্রাট সাইয়িদূনা রসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার সাহাবাবর্গ এবং পবিত্র আহলে বাইতের উপর।
আল্লাহর প্রিয় ও নৈকট্যশীল বান্দাদের তাওহীদি বৃক্ষের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহন করেছে লাখ লাখ শির্ক-কারী পাপাচারী । তাদের পূণ্যময় ব্যক্তিত্ব কোটি কোটি মানুষকে দিয়েছে সঠিক পথের দিশা। আজ আমাদের মাঝে এই মহাপুরুষগণ নেই। কিন্তু তাদের আধ্যাত্মিক উপস্থিতি আমাদের মাঝে বর্তমান। আমরা যদি বস্তুবাদী সভ্যতার তথাকথিত রোলমডেল অভিনেতা-অভিনেত্রী, ক্রিকেটার-ফুটবলার ইত্যাদিদের বাহ্যিক ঝকঝকে চকচকে গ্ল্যামার এর ফাঁদ কাটিয়ে এখনও পারি আল্লাহর প্রিয় ও নৈকট্যশীল বান্দাদের সোনালী জীবনকে রোল্মডেল হিসেবে গ্রহন করতে তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে সক্ষম হব মুক্তির বদ্ধদ্বার খুলতে এবং সঠিক পথের পথিক হতে।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার তাঁর নাবী ও ওলীগনকে আমাদের জন্য রোলমডেল বানিয়েছেন এবং আমাদেরকে কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করেছেন তাদেরকে অনুসরণ করার জন্য। আল কুরআনের একেবারে প্রথম অধ্যায়ে শুরা ফাতিহায় আল্লাহ পাক আমদেরকে তাঁর নিকট এই দোয়া করার নির্দেশ দিচ্ছেন যেঃ
اهدنا الصراط المستقيم
صراط الذين أنعمت عليهم
৫.আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করো! ৬. তাঁদেরই পথে, যাঁদের উপর তুমি অনুগ্রহ করেছো [ সূরা ফাতিহা – সূরাহ নং ১ – আয়াত নং ৫-৬]।
এখানে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, এখানে “সোজা পথ” বলতে যে “নাবী ও ওলীগন” এর পথ বোঝান হয়েছে এবং “ যাঁদের উপর তুমি অনুগ্রহ করেছো” বলতে যে “ “নাবী ও ওলীগনকে” অনুগ্রহ করা হয়েছে এর দলীল কি? প্রিয় পাঠ, এর উত্তর আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা স্বয়ং সুস্পষ্ট ভাবে প্রদান করেছেন সূরা নিশায়। আল্লাহ পাক বলেনঃ
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا
অনুবাদঃ যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে সে তাদের সহযোগী হবে যাদেরকে আল্লাহ পুরস্কৃত করেছেন অর্থাৎ নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল গন। এরা কতই উত্তম সঙ্গী! [ কানযুল ইমান – সূরা নিশা– সূরাহ নং ৪ – আয়াত নং ৬৯ ]।
উত্থাপিত সন্দেহ নিরসন হয়ে যাওয়ার পর এবার ভেবে দেখুন, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার নির্দেশে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি রাকাআতে আমরা আল্লাহর নিকট দোয়া করি যে, হে আল্লাহ, আমাদেরকে তোমার নবী ও ওলীগনের পথে চালাও। এভাবে দিনে অন্ততঃ মোট বত্রিশ বার আল্লাহর নিকট দোয়া করি যে, হে আল্লাহ, আমাদেরকে তোমার অনুগ্রহ-প্রাপ্ত নবী ও ওলীগন কর্তৃক অনুসৃত সোজা পথে চালাও। আর নামায থেকে বেরিয়ে এসে আমরা বলতে শুরু করি যে, আমরা কোন ওলীর কথা মানি না, শাইখ গারীবে নাওয়াজ খাজা মইনুদ্দিন চিশতী কিংবা বড়পীর আব্দুল কাদির জ্বিলানী যে ওলী ছিল তার প্রমান কি? কত অজ্ঞতা ভেবে দেখুন! তুমি যদি ওলীকে চিন্তেই না পারো তুমি তাহলে তাঁর পথে চলবে কিভাবে? তাহলে প্রতিদিন পাঁচ অয়াক্ত নামাযে অন্ততঃ মোট ৩২ বার তুমি কেন আল্লাহ পাককে মিথ্যা কথা বলছ?
আবার কিছু ভাই বলে যে, আমরা “কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস মানি”। আল্লাহর বান্দা! আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা নির্দেশ প্রদান করছেন নবী ও ওলীগনের পথে চলতে আর তুমি বলছ যে “ কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস” মানব। আল্লাহ পাক কি বলেছেন যে ইহদিনাস সিরাত্বাল কুরআন ওয়া সহীহ হাদীস”? এই মনগড়া বানোয়াট উসূল কোথা থেকে আবিস্কৃত হয়ে গেল? আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার নিকট কি কোন কিছু গোপন থাকে? আল্লাহ পাক জানতেন যে কিছু লোক অহংকারবশতঃ, ইর্সাবশতঃ, শয়তানের কুমন্ত্রণায় ও নাফসের দাসত্বে লিপ্ত হয়ে তাঁর নাবী ও অলিগণকে অমান্য করবে। তাঁদের শানে গুস্তাখী করবে। আর এজন্য তিনি এমন নির্দেশ প্রদান করেছেন যে দিনে তোমরা অন্তত ৩২ বার এই দোয়া কর যে, হে আল্লাহ, আমাদেরকে তোমার নবী ও ওলীগনের পথে চালাও যেন তাঁর বান্দাহরা বিপথগামী না হয়। কিন্তু যারা শয়তানী তাওহীদের অনুসারী তারা নবী ও ওলীগনকে অমান্য করার জন্য বিভিন্ন মনগড়া বানোয়াট যুক্তি বানিয়ে নিয়েছে। আরে কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস মান্য করার দাবিদার! হাদীস কাকে বলে তুমি তো কুরান ও সহীহ হাদীস থেকে এটাই দেখাতে পারবে না! আরে কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস মান্য করার দাবিদার! সহীহ হাদীস কাকে বলে তুমি তো কুরান ও সহীহ হাদীস থেকে এটাও দেখাতে পারবে না! ফলে তুমি নিজের সারা জীবনকে কিভাবে কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী চালাবে? যারা বলে যে, কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস মানতে হবে তাদের সারা বিশ্বের আলেমদেরকে আমাদের বিনীত চ্যালেঞ্জ থাকল যে, শুধু হাদীস ও সহীহ হাদীস এই দুটোর সঙ্গা যদি কুরআন ও হাদীস থেকে আমাদেরকে দেখিয়ে দেয়, তাহলে আমরা তাঁদের কথা মেনে নেব। আর যদি না পারে, চ্যালেঞ্জ করছি পারবে না, তাহলে আল্লাহ পাকের নিকট তাওবার রাস্তা খোলা আছে। শয়তানী তাওহীদের অনুসারীরা বোঝে না যে, আল্লাহ পাকের ওলীগন কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করেছেন। তারা কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করেছেন বলেই তারা আল্লাহ পাকের অনুগ্রহপ্রাপ্ত ও প্রিয় বান্দা। তাঁদেরকে অনুসরণ করার অর্থ কুরআন ও হাদিসকেই অনুসরণ করা।
আবার কিছু ভাই বলেন যে, আমরা আরবের ইসলাম মানি। আরবে যে ভাবে ইসলাম রয়েছে, আমরা সেটাকেই অনুসরণ করব। এটাও অজ্ঞতার সীমা লংঘন। ভাই, আল্লাহ পাক কোন জায়গায় বলেছেন যে, কুরআন হাদীস নবী অলিগনের পথ পরিত্যাগ করে তুমি আরবকে অনুসরণ করে চল? ভাই, এখন আরব আর আরব নেই, আরব হয়ে গেছে সউদি আরব! কুরআন বা হাদীসে সউদি আরব শব্দটি কোথাও আছে? এই সউদি আরব নামটাই বিদআত! সবচেয়ে নিকৃস্ট বিদআত! ঈবনে সাউদ নামক এক সন্ত্রাসবাদীর নামে পবিত্র আরবের নামকরণ করে ইংরেজ ও আমেরিকা এবং উসমানী খেলাফাতকে আরব থেকে ইংরেজ ও আমেরিকানরা তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে সন্ত্রাসবাদী ইবনে সউদ ও তার পরিবারকে তারা ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়। একজন সন্ত্রাসবাদীর নামে যে রাজত্ব তাকি ইসলামী রাজত্ব? এই সন্ত্রাসবাদীদের শাসন কি ইসলামী শাসন? এই সন্ত্রাসবাদীদের আইন কানুন কি ইসলামী আইন কানুন? এরা তো হচ্ছে ইংরেজ ও আমেরিকার পুতুল! এদের নোংরামীর ইতিহাস অন্য কোন সময় আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব ইন শা আল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তাঁর অলীদের মর্যাদা এত সুউচ্চ করেছেন যে, তাদের চর্চাকে মুসলিম উম্মাহর জন্য অপরিহার্য করে দিয়েছেন। আল্লাহ পাক বলেনঃ
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا
অনুবাদঃ এবং আপন আত্মাকে তাদেরই সাথে সম্বন্ধযুক্ত রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় আপন প্রতিপালককে আহ্বান করে, তারই সন্তুষ্টি চায় এবং আপনার চক্ষুদ্বয় যেন তাদেরকে ছেড়ে অন্য দিকে না ফিরে; আপনি কি পার্থিব জীবনের শোভা-সৌন্দর্য কামনা করবেন? এবং তার কথা মানবেন না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণে অমনোযাগী করে দিয়েছি এবং সে আপন খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেছে আর তার কার্যকলাপ সীমাতিক্রম করে গেছে [ কানযুল ইমান – সূরা কাহাফ– সূরাহ নং ১৮ – আয়াত নং ২৮ ]। আল্লাহ পাক আরও বলেনঃ
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ
অনুবাদঃ সুতরাং তোমরা আমার স্মরণ কর, আমিও তোমাদের চর্চা করব । আর আমার কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর এবং আমার কৃতঘ্ন হয়োনা গেছে [ কানযুল ইমান – সূরা বাকারা– সূরাহ নং ২ – আয়াত নং ১৫২ ]।
ইদানিং একটি ব্যধি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। তা হল, ওলীদের কারামতকে অস্বিকার করা ও কেচ্ছা-কাহিনী বলে বিদ্রুপ করা। প্রিয় মুমীন ভাই, সাবধান সাবধান! সতর্ক হয়ে যান! আল্লাহর ওলীগনের কারামতকে অস্বীকার করার অর্থ হল আল কুরআনকে অস্বীকার করা। আল্লাহর ওলীগনের কারামতকে অস্বীকার করার অর্থ হল সহীহ বুখারী সহ সকল হাদীস গ্রন্থকে অস্বীকার করা। কারামত কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে প্রমাণিত বিষয়। কারামাত হচ্ছে কারামাহ শব্দের বহুবচন। কারামাহ হল স্বাভাবিকের সাংঘর্ষিক অলৌকিক ঘটনা যা আল্লাহ তা’আলা কোন ওলীর হাতে ঘটান। তার বলবৃদ্ধি করতে কিংবা সহায়তা করতে কিংবা দৃঢ়পদ করতে কিংবা দীনের সাহায্য করতে। যে ঘটনা লৌকিকতা বা স্বাভাবিকের অনুযায়ী হয়, তা কারামত নয়। নিজের বুদ্ধি-যুক্তি দিয়ে কারামতকে উপলব্ধি করার চেস্টা বাতুলতা মাত্র। ইহা মু’তাযিলা ও তাদের অনুসারীদের বৈশিস্ট।তারা দাবি করে যে, যদি কারামত প্রমাণিত বিষয় হত, তাহলে তো ওলীর সাথে নবীর সামঞ্জস্য হয়ে যায়! কেননা এদের সবাই অলৌকিক ঘটনা নিয়ে এসেছে। উত্তর হল যে, ওলীর পক্ষে কখনো নবুওত দাবী করা সম্ভব নয়। যদি সে দাবী করে বসে, তবে সে কোন ওলী নয়। কোন ওলীর প্রত্যেকটি কারামত হচ্ছে তাঁর অনুসরনীয় নবীর নিদর্শন। কারামত হচ্ছে আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে ঘোষণা যে, এই ওলী সত্যপথে রয়েছেন। উলামাগণ বলেছেন যে, পূর্বের নবীদের নিদর্শনগুলোর মধ্যে এমন কোন নিদর্শন নেই যার ঠিক অনুরূপ নিদর্শন নবীকূলসম্রাট সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নেই।
কুরআন থেকে কারামতের প্রমানঃ আসহাবে কাহফের ঘটনা সকলেরই জানা। তারা বাস করত এক মুশরিক জাতির মাঝে। তারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল এবং যখন প্রানহাবীর আশংকা হয়েছিল তখন তারা নিজ এলাকা পরিত্যাগ করে বেরিয়ে পড়েছিল এবং মুশরিক সম্রাটের প্রেরীত সৈন্যবাহিনীর নিকট থেকে আত্মগোপন করার জন্য একটি গুহার মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের সঙ্গে একটি কুকুর ছিল। সেখানে এতে তার ৩০৯ বছরের অধিক ঘুমন্ত অবস্থায় অবস্থান করে। অবশেষে তারা এবং তাদের কুকুর সুস্থ-স্বাভাবিক ভাবে জাগ্রত হয়। এছাড়া রয়েছে হযরত মারিয়ামের কারামত। এছাড়াও রয়েছে সেই ব্যক্তির কারামাত যাকে আল্লাহ একশত বছর মৃত রেখে পুনরায় জীবিত করেন।
হাদীস থেকে কারামতের প্রমানঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ইব্রাহীমের ন্যায় আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার পর নিজে জীবন্ত বেরিয়ে আসেন নি কিন্তু আল আসওয়াদ আল ‘আনসী আবু মুসলিম আল খাওলানীকে আগুনে নিক্ষেপ করেছিল, কিন্তু আগুন তার কোন ক্ষতি করে নি [ তথ্যসূত্রঃ ইবনুল জাওযী, সিফাতুস সফওয়াহ, খন্ড নং ৪, পৃষ্ঠা নং ২০৮ ] । এটি নবীকূলসম্রাটের উম্মতের কারামত কিন্তু এটি নিদর্শন নবীকূলসম্রাট সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্যে সমুদ্র বিভাজিত হয় নি, যেভাবে মুসার জন্য বিভাজিত হয়েছিল। কিন্তু এই উম্মতের ক্ষেত্রে সমুদ্রের ক্ষেত্রে মুসার চাইতেও বড় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তা হচ্ছে খোদ পানির উপর দিয়েই হেটে যাওয়া। সাহম বিন মিনজাব থেকে বর্ণনা করেছেনযে, আমরা আল ‘আলা আল হাদ্বরামীর সাথে একটি যুদ্ধের অভিযান গেলাম। যেতে যেতে আমরা দারাইনের কাছে আসলাম। তাদের ও আমাদের মাঝে বাধা ছিল সমুদ্র। ফলে তিনি বললেন: ইয়া আলীমু! ইয়া হালীমু! ইয়া আলিয়্যু! ইয়া আযীম! আমরা আপনার দাস! আপনার রাস্তায় আপনার দুশমনদের বিরূদ্ধে লড়াই করছি। সুতরাং আমাদের জন্য তাদের কাছে পৌঁছার রাস্তা করে দিন। সুতরাং আমরা সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়লাম অথচ পানি কেবল আমাদের গোড়ালি পর্যন্ত পৌঁছল [ তথ্যসূত্রঃ আবু নু’আইম, আল হিলয়াহ, খন্ড নং ৭, পৃষ্ঠা নং ১]।
সুতরাং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের মাযহাব হচ্ছে ওলীদের কারামত সত্য বলে স্বীকার করা। এদিকে আহলুস সুন্নাহর মাযহাব বিরোধী মাযহাবও রয়েছে। যারা বিস্তারিত জানতে চায় সে যেন ইবন কাসীরের ইতিহাস গ্রন্থ “আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ” পড়ে নেয়।
মূল্কথা হল, কারামাত হয় বলবৃদ্ধি করতে কিংবা দৃঢ়তা বাড়াতে কিংবা ব্যক্তিকে সাহায্য করতে কিংবা সত্যকে জয়ী করতে। একারণেই সাহাবীদের তুলনায় তাবেয়ীদের ক্ষেত্রে কারামত বেশি ঘটেছে। কেননা সাহাবীদের যেই পরিমাণ দৃঢ়তা, মজবুতি ও দীনের জন্য সাহায্য ছিল তার কারণে তাদের কারামতের মুখাপেক্ষিতা ছিল না। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝেই বিদ্যমান ছিলেন। কিন্তু তাবেয়ীদের অবস্থান এর চাইতে নিম্নে। একারণেই তাদের যুগে তাদের সাহায্য, দৃঢ়তা বৃদ্ধি ও তারা যে সত্যের উপর ছিলেন তার বিজয়ে বহু কারামত সংঘটিত হয়েছে। এই সব কারামত চারটি নির্দেশনা প্রদান করে।
প্রথমত: কারামতের মাধ্যমে আল্লাহ আযযা ওয়াজাল্লের পরিপূর্নতা ফুটে ওঠে। কেননা আল্লাহর আদেশে স্বাভাবিকের সাংঘর্ষিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: যারা বলে প্রকৃতিই মূল কর্তা তাদের বক্তব্যের মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। কেননা প্রকৃতিই যদি কর্তা হত, তাহলে প্রকৃতির আচরণ সর্বদা একই রকম হত, কখনো ব্যত্যয় ঘটত না। যখন স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে তখন প্রমাণিত হয়েছে যে জগতের একজন নিয়ন্ত্রণকারী এবং স্রষ্টা রয়েছেন।
তৃতীয়ত: এটি অনুসৃত নবীর নিদর্শন আমরা আলোচনা করেছি।
চতুর্থত: এর মধ্যে এই ওলীর জন্য দৃঢ়তা ও কারামত (সম্মাননা) রয়েছে। উক্তি “বিভিন্ন প্রকারের জ্ঞানলাভ, কাশফ, বিভিন্ন প্রকারের ক্ষমতা ও প্রভাব” অর্থাৎ কারামত দুইভাগে ভাগ করা যায়: একভাগ যার সম্পর্কে জ্ঞান ও কাশফের (উন্মোচন) সাথে। অপরভাগের সম্পর্ক ক্ষমতা ও তাছীর-প্রভাবের সাথে। জ্ঞানের ক্ষেত্রে কথা হচ্ছে – ব্যক্তির এমন জ্ঞান লাভ হয় যা অন্যদের হয় না। কাশফের ক্ষেত্রে কথা হচ্ছে – তার জন্য এমন সব বিষয় প্রকাশমান হয় এবং তার সামনে উম্নোচিত বা কাশফ হয় যা অন্যদের জন্য হয় না। প্রথম প্রকার তথা জ্ঞানের দৃষ্টান্ত হচ্ছে যা আবু বকর সম্পর্কে উল্লেখিত আছে যে আল্লাহ তাকে তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান জানিয়ে দেন। আল্লাহ তাকে জানিয়ে দেন যে, এটি কন্যাসন্তান [ তথ্যসূত্রঃ আল লালকায়ী, “কারামাতুল আওলিয়া , পৃষ্ঠা নং ৬৩ এবং ইবন হাজার, “আল ইসাবা্, খন্ড নং ৪, পৃষ্ঠা নং ২৬১ ]। দ্বিতীয় প্রকার তথা কাশফের দৃষ্টান্ত হচ্ছে যা আমীরুল মুমিনীন উমার বিন আল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুর ক্ষেত্রে ঘটেছিল যখন জুমার দিন মিম্বরের উপর মানুষের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন। এমনসময় তারা শুনতে পায় যে, উমার বলছেন – হে সারিয়্যাহ! পাহাড়! পাহাড়! তারা এই কথায় আশ্চর্য হয়ে যায়। অতঃপর এ সম্পর্কে তারা তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যে, তার সামনে সারিয়্যাহ বিন যুনায়ম উন্মোচিত বা কাশফ হয়েছিল যিনি ইরাকে উমারের একজন সেনাপতি ছিলেন এবং কাশফ হয় যে, শত্রুরা তাকে ঘেরাও করে নিচ্ছে। তাই উমার তাকে পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করেন এবং তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন – হে সারিয়্যাহ! পাহাড়! পাহাড়! সারিয়্যাহ উমারের আওয়াজ শুনতে পান এবং পাহাড়ের দিকে সরে আসেন এবং এর মাধ্যমে প্রতিরক্ষা লাভ করেন! [তথ্যসূত্রঃ ইবন কাসীর, “আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খন্ড নং ৭, পৃষ্ঠা নং ১৩১]। আলবানীর মত কুখ্যাত হাদীস-অস্বীকারকারীও একে হাসান হাদীস বলে স্বীকার করেছে [ তথ্যসূত্রঃ আলবানী, “আস সিলসিলাতুস সহীহাহ”, হাদীস নং ১১১০]।
শাইখ হযরত আহম্মদ কবীর রিফাঈ রহিমুহুল্লাহ রওযা শরীফ বেরিয়ে আসা রসূল পাকের হাত চুম্বন করলেনঃ বিশ্বনন্দিত ওলী-আল্লাহ হযরত আহম্মদ কবীর রিফাঈ [৫২২-৫৭৮ হি ] ছিলেন প্রথিতযশা মুহাদ্দিস ও ইমাম। উসূলে হাদীসের বিশেসজ্ঞ ইমাম যাহাবী রহিমুহুল্লাহ বলেন, হযরত আহম্মদ কবীর রিফাঈ ইমামুল কুদওয়াহ,যাহেদ, আলআবেদ,শাইখুল আরেফীন ছিলেন [ তথ্যসূত্রঃ ইমাম যাহাবী, সীয়ারু আলামিন নুবালা, খন্ড নং ২১, পৃষ্ঠা নং ৭৭]। নবীকূলসম্রাটের রওযা শরীফের সম্মুখে দাঁড়িয়ে এ কবিতা আবৃত্তি করলেন,
“হে প্রিয় রাসুল (ﷺ)!
দূরে অবস্থানকালে তো স্বীয় রুহকে রওজা মোবারকে পাঠিয়ে দিতাম,
যেন আঁপনার কদমে চুম্বন করে যায়।
এখন তো আমি সশরীরে আঁপনার মহান দরবারে উপস্থিত হয়েছি
সুতরাং আঁপনার বরকতময় হাত বাড়িয়ে দিন,
যেন আমার ওষ্ঠ তা চুম্বনের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে।
তখন রওযা শরীফ থেকে নবীকূলসম্রাট সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র বরকতপূর্ন হাত বের হলো। শাইখ হযরত আহম্মদ কবীর রিফাঈ রহিমুহুল্লাহ সেই হাত মোবারক চুম্বন করলেন [ তথ্যসূত্রঃ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি, আল-হাবী লিল- ফতোয়া, খন্ড নং ২, পৃষ্ঠা নং ৪৮]। এই বর্ননা একাধিক সনদে এসেছে এবং সব সনদই শক্তিশালী।
বিদআতিরা এই বর্ননাকে অস্বিকার করে এবং কেচ্ছা-কাহিনী বলে ঠাট্টা-তামাসা করে। ইহা চরম অজ্ঞতা। যুগে যুগে মুহাদ্দিসগণ এই ঘটনা আলোচনা করেছেন এবং এই ঘটনার সনদ সহীহ।
প্রথম সনদ এর তাহকীকঃ ইমাম আব্দুল করীম বিন মুহাম্মদ রেফায়ী রহিমুহুল্লাহ [মৃত্যু ৬২৩ হিজরী] বলেন যে, ,
اخبرني شيخنا الامام الحجة القدوة ابو الفرج عمر الفاروثي الواسطي قال حج سيدناوشيخنا السيد احمد الرفاعي عام خمس وخمسين وخمسمائة فلما وصل المدينة…….তিনি শুনেছেন,ইমাম আবুল ফরজ উমার ফারূছী থেকে যিনি শুনেছেন ইমাম কাবীর রেফায়ী রহিমুল্লাহর নিকট থেকে [ তথ্যসূত্রঃ সাওয়াদুল আইনাঈন, ১০-১১]
প্রথম সনদের ১ নং রাবী ইমাম আব্দুল করীম বিন মুহাম্মদ রেফায়ী [মৃত্যু ৬২৩ হিজরী]
১. ইমাম যাহাবী রহিমুহুল্লাহ তার ব্যাপারে বলেন,
شَيْخُ الشَّافِعِيَّةِ، عَالِمُ العَجمِ وَالعَربِ، إِمَامُ الدِّينِ
তিনি শাফী মাযহাবের শায়েখ,আরব আজমের শায়েখ এবং দ্বীনের ইমাম।
২. ইমাম তাজুদ্দীন সুবকী রহিমুহুল্লাহ [মৃত্যু ৬৪৩ হিজরী] বলেন,
أظنُ أنّي لم أرَ في بلاد العَجَم مثله
আমি তার মত ব্যক্তি আজমের শহরের কোথাও দেখিনি বলে মনে হয়।
৩. ইমাম নববী রহিমুহুল্লাহ [মৃত্যু ৬৭৬হিজরী] বলেন,
الرَّافعيّ من الصالحين المُتَمكّنين، كانت لَهُ كراماتٌ كثيرة ظاهرة.
ইমাম রেফায়ী নেক বান্দা,তার অনেক জাহেরী কারামত রয়েছে।
৪। ইমাম ইবনুস সাফফার রহিমুহুল্লাহ [মৃত্যু ৬৪৮ হিজরী] বলেন,
هُوَ شيخُنا، أمامُ الدِّين وناصر السُّنَّة صِدقًا.
তিনি আমাদের শায়েখ,দ্বীনের ইমাম এবং সুন্নাতের সত্যিকার সাহায্যকারী [যিন্দাকারী] ছিলেন।
[ তথ্যসূত্র : সীয়ারু আলামিন নুবালা-২২/২৫২, তারীখুল ইসলাম লিজযাহাবী-১৩/৭৪২
প্রথম সনদের ২ নং রাবী ইমাম ইজ্জুদ্দীন আবুল ফরজ উমর আলফারূছী [মৃত্যু ৫৮৫ হিজরী]
১. ইমাম রেফায়ী রহিমুহুল্লাহ [মৃত্যু ৬২৩ হিজরী] তার ব্যাপারে বলেন,
الامام الحجة القدوة
ইমাম হুজ্জাত ও কুদওয়াহ। [গ্রন্থ সূত্রঃ সাওয়াদুল আইনাঈন-১০]
তিনি আরেক স্থানে বলেন,
شيخنا امام الفقهاء وسيد العلماء ابو الفرج عمر الفاروثي
তিনি হলেন আমাদের শায়েখ, ইমামুল ফুক্বাহা, সাইয়্যিদুল উলামা আবুল ফরজ উমর আলফারূছী [গ্রন্থ সূত্রঃ সাওয়াদুল আইনাঈন-৮]
২. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী [মৃত্যু ৬৭৬ হিজরী] তার সম্পর্কে বলেন,
إمام الفقهاء والمحدثين وشيخ أكابر الفقهاء والعلماء العاملين الشيخ عز الدين عمر أبي الفرج الفاروثي الواسطي
৩. ইমাম আহমাদ বিন ইবরাহীম আলফারূছী [মৃত্যু ৬৯৪ হিজরী] বলেন,
الامام الفقيه أبي الفرج عمر الفاروثي
ইমাম,ফক্বীহ আবুল ফরজ উমর আলফারূছী [গ্রন্থ সূত্রঃ ইরশাদুল মুসলিমীন-৮৮]
৪. ইমাম তাক্বীউদ্দীন আব্দুর রহমান আল আনসারী [মৃত্যু ৭৪৪ হিজরী] বলেন,
العارف الكبير ولي الله العلامة السند الثبت الفقيه المقري المحدث أبي الفرج عمر الفاروثي
আলআরেফুল কাবীর,ওয়ালীআল্লাহ,আলমুসনাদ, সাবেত,ফক্বীহ,মুকরী, আলমুহাদ্দিস,আবুল ফরজ উমর ফারূছী [গ্রন্থ সূত্রঃ তরয়াকুল মুহিব্বীন-১/৮]
সুতরাং ইমাম ইজ্জুদ্দীন আবুল ফরজ উমর আলফারূছী সিকা ও মজবুত রাবী ছিলেন।
প্রথম সনদের মূল ব্যক্তিত্ব ইমাম শায়েখ কাবীর আহমাদ রেফায়ী রহঃ [মৃত্যু ৫৭৮ হিজরী]
১. তার ব্যাপারে ইমাম যাহাবী (রহঃ) [মৃত্যু ৭৪৮ হিজরী] বলেন,
الإِمَامُ، القُدْوَةُ، العَابِدُ، الزَّاهِدُ، شَيْخُ العَارِفِيْن
ইমাম, কুদওয়াহ, আবেদ, যাহেদ, শাইখুল আরেফীন। [গ্রন্থ সূত্রঃসিয়ারু আলামিন নুবালা- ২১/৭৭]
২. ইমাম তাযুদ্দীন সুবকী (রহঃ) [মৃত্যু ৭৭১ হিজরী] বলেন,
أحد أَوْلِيَاء الله العارفين والسادات المشمرين أهل الكرامات الباهرة أَبُو الْعَبَّاس بن أبي الْحسن بن الرِّفَاعِي المغربي
আল্লাহর ওলী,যাহেরী কারামতওয়ালা, আরেফীন ও সাদাতের অন্তর্ভূক্ত। [গ্রন্থ সূত্রঃ তাবক্বাতুস শাফেয়িয়্যাহ লিসসুবকী-৬/২৩]
৩. ইমাম ইবনে খাল্লিকান [মৃত্যু ৬৮১ হিজরী] এবং ইমাম খালীল বিন আইবেক সাফাদী রহঃ [মৃত্যু ৬৮১ হিজরী এ দুই ইমাম বলেন,
كَانَ رجلا صَالحا شافعيا فَقِيها
তিনি নেক বান্দা শাফেয়ী ফক্বীহ ছিলেন। [গ্রন্থ সূত্রঃ তাবক্বাতুস শাফেয়িয়্যাহ লিইবনে কাযী শাইবা-২/৫]
**৪. ইমাম সাফাদী আরও বলেন,
الزَّاهِد الْكَبِير سُلْطَان العارفين فِي زَمَانه
তিনি বড় যাহেদ,তার জমানার সুলতানুল আরেফীন ছিলেন। [গ্রন্থ সূত্রঃ আলওয়াফী বিলওয়াফিয়্যাত- ৭/১৪৩]। সুতরাং প্রমানিত হল যে, এই সনদটি বিশুদ্ধ।
দ্বিতীয় সনদ এর তাহকীকঃ এই রেওয়ায়েত শায়েখ আব্দুস শামী আলহাশেমী রহিমুহুল্লাহ থেকেও বর্নিত আছে [ গ্রন্থ সূত্রঃ সাওয়াদুল আইনাঈন-৯-১০]। ইমাম আব্দুল করীম বিন মুহাম্মদ রেফায়ী রহিমুহুল্লাহ শায়েখ আব্দুস শামী আলহাশেমী কে [মৃত্যু ৫৮০ হিজরী] সনদুল মুহাদ্দিসীন, ইমাম ইজ্জুদ্দীন আল ফারূছী [মৃত্যু ৬৯৪ হিজরী] তাঁকে শায়েখুশ শায়েখ এবং ইমাম আবু আব্দুল্লাহ [মৃত্যু ৬৩৭ হিজরী] তাকে শরীফ, সালেহ এবং আবেদ বলে মন্তব্য করেছেন[গ্রন্থ সূত্রঃ ইরশাদুল মুসলিমীন-২৬৫, তারীখ ইবনে দাবীছী-৭৯, নং-১৪৮]। ফলে এই সনদও সমানভাবে বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী।
শাইখ হযরত আহম্মদ কবীর রিফাঈ রহিমুহুল্লাহ কর্তৃক রওযা শরীফ থেকে বেরিয়ে আসা রসূল পাকের হাত চুম্বনের ঘটনাটি নীচের গ্রন্থগুলিতেও বর্নিত হয়েছেঃ
(ক.) ইমাম আলী বিন আঞ্জাব, মুখতাছার তারীখুল খুলাফা, ৯৭-৯৯। তিনি ৫টি ভিন্ন সনদে কাবীর আহমাদ রেফায়ীর ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন।
(খ.) ইমাম আলী বিন আলহাসান বিন আহমাদ আলওয়াসেতী, “খুলাসাতুল আকছীর ফী নাসীবে সাইয়্যিদুনা রেফায়ী আলকাবীর”, পৃষ্ঠা নং ৩০
(গ.) মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আলমাখজূমী, সিহাউল আখবার, পৃষ্ঠা নং ৬৯]
(ঘ.) ইমাম ইজ্জুদ্দীন আহমাদ বিন ইব্রাহীম আলফারূছী, “ইরশাদুল মুসলিমীন”, পৃষ্ঠা নং ৮৮
(ঙ.) শায়েখ ইজ্জুদ্দীন আহমাদ সাঈদ, আলমাআরেফুল মুহাম্মাদিয়া, পৃষ্ঠা নং ৫৯
(চ.) শায়েখ শরফুদ্দীন মুহাম্মদ বিন আব্দুস শামী, আলবুরহানুল মুআইয়্যিদ, পৃষ্ঠা নং ১২।
শায়েখ মুহাম্মদ বিন আব্দুস শামী শায়েখ কাবীর রেফায়ীর ছাত্র ছিলেন।
(ছ.) হাফেজ তাক্বীউদ্দীন আব্দুর রহমান আলওয়াসেতী, তরয়াকুল মুহিব্বীন, খন্ড নং ১, পৃষ্ঠা নং ১২
(জ) ইমাম মুহাম্মদ বিন আব্দুর রউফ আলমানায়ী, আলকাওয়াকিবুদ দুররিয়্যাহ, খন্ড নং ২, পৃষ্ঠা নং ২২০
প্রায় ৫০টি গ্রন্থে উক্ত ঘটনাটি বর্ননা করা হয়েছে। এমনকি ওহাবী দেওবন্দী ফির্কার
গ্রন্থ ফাযায়েলে হজ্ব এর ১৩০ পৃষ্ঠায় এই ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এই ঘটনাকে কেচ্ছা কাহিনী বলা কুরআন ও হাদিসের অবমাননা।
ইবনে কাসীর (রহ.) আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে আবিদ দুনিয়ার সূত্রে ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন।ইবনে আবিদ দুনিয়া (রহ.) নিজ সনদে বর্ণনা করেন,রবীয়া ইবনে কুলসুম জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছেন,উক্ত ব্যক্তির এক বৃদ্ধা প্রতিবেশী ছিল।তিনি অন্ধ ও কিছুটা বধির ছিলেন।হাটা-চলা করতে পারতেন না।তার একটি মাত্র ছেলে ছিল।ছেলেটি তার দেখা-শোনা করতো।ছেলেটি মৃত্যুবরণ করল।আমরা এসে বৃদ্ধাকে বললাম,মুসীবতে আল্লাহর উপর সবর করুন।তিনি বললেন,কী হয়েছে? আমার ছেলে কি মারা গেছে? হে আমার মাওলা,আমার উপর রহম করো।আমার থেকে আমার ছেলেকে নিও না।আমি অন্ধ,বধির ও অচল।আমার দুনিয়াতে আর কেউ নেই।মাওলা,আমার উপর রহম করুন।আমি বললাম,বৃদ্ধার স্মৃতিভ্রম হয়েছে।এই বলে আমি বাজারে গেলাম। আমি তার কাফনের কাপড় ক্রয় করে নিয়ে এলাম।ফিরে এসে দেখি সে জীবিত হয়ে বসে আছে।
তথ্যসূত্রঃ (ক.) আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৬ষ্ট খন্ড,পৃ.১৫৪।
(খ.) দালাইলুন নুবুওয়া,৬ষ্ট খন্ড,পৃ.৫০-৫১
বৃদ্ধ কৃষকের কারামত: অতীত কালে একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলছিল। হঠাৎ মাথার উপর মেঘমালা থেকে একটি শব্দ শুনল যে, অমুকের বাগানে বর্ষণ কর। লোকটি মেঘমালাকে অনুসরণ করে পথ চলতে থাকল। অবশেষে একটি যমিনে বৃষ্টি বর্ষণ হল। সে খানে দেখতে পেল একজন লোক কোদাল হাতে নিয়ে বাগানে কাজ করছে। লোকটি বাগান ওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করল তোমার নাম কি? সে বললঃ আমার নাম অমুক। যে নামটি সে মেঘ থেকে শুনেছিল। তারপর বাগানের মালিক জিজ্ঞাসা করল, তুমি কেন আমার নাম জিজ্ঞাসা করছ? উত্তরে সে বললঃ যে মেঘ থেকে এই বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে, আমি তোমার নামটি সেই মেঘের ভিতরে শুনতে পেয়েছি। তাই আমি তোমার নাম জিজ্ঞেস করছি। তোমার কাছে আমার আরো একটি প্রশ্ন হল, তুমি কিভাবে এই বাগানের ফসল ব্যয় কর, তাও আমি জানতে চাই। সে বললঃ আমার যমিনে উৎপাদিত ফসলকে তিনভাগে বিভক্ত করি। একভাগ আমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করি। একভাগ পুনরায় ফসল আবাদের কাজে ব্যয় করি। আর এক ভাগ ফকীর, মিসকীন এবং মুসাফিরদের মাঝে বন্টন করে দেই। [তথ্যসূত্রঃ মুসলিম,তাফসীরে ইবনে কাছীর]
হযরত হামজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কবর থেকে সালামের উত্তর: ইমাম ইবনে কাসীর আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে লিখেছেন যে, হযরত আত্তাফ বিন খালিদ তার খালা থেকে বর্ণনা করেন,এক দিন আমি উহুদের শহীদগণের কবরের দিকে যাই। (তিনি প্রায়ই তাদের কবর জিয়ারত করতেন)। তিনি বলেন, আমি হযরত হামযার কবরের নিকট বাহন থেকে নামলাম। আল্লাহর তৌফিকে সেখানে কিছু নামায আদায় করলাম। উপত্যকায় আর সাড়া-শব্দ দেয়ার মতো কেউ ছিল না। আমার বাহনের লাগাম ধরে ছিল ছোট্র একটি ছেলে ছিল। আমি কবরের উদ্দেশ্যে আস-সালামু আলাইকুম বললাম। আমি স্পষ্ট মাটির নীচ থেকে সালামের উত্তর পেলাম। ওয়ালাইকুমুস সালাম। আমার কাছে উত্তরটি এতটা স্পষ্ট ও সুনিশ্চিত যেমন, আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন, এটা সুনিশ্চিত। রাত্র-দিনের পার্থক্য যেমন সুস্পষ্ট,এই সালামের উত্তরও তেমনি সুস্পষ্ট। সালামের উত্তর শুনে আমার প্রত্যেকটি লোমকূপ দাড়িয়ে গেল। আমার শরীর ভয়ে শিহরিত হল।
তথ্যসূত্রঃ (ক.) আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৪র্থ খন্ড,পৃ.৪৫
(খ.) দালাইলুন নুবুওয়াহ,ইমাম বাইহাকী (রহ:): ৩য় খন্ড,পৃ.৩০৮
ইবনে কাসীর আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে লিখেছেন যে, এক দল লোক ইয়ামান থেকে আল্লাহর পথে বের হল।পথিমধ্যে তাদের একজনের গাধা মৃত্যুবরণ করল। তার সহযাত্রীরা তাকে অন্য গাধার উপর আরোহরণের অনুরোধ জানাল। কিন্তু সে অস্বীকার করল। সে উঠে উজু করল। নামায আদায় করে দুয়া করল, হে আল্লাহ, আমি দাফিনা শহর থেকে আপনার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। আমি একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এসেছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি মৃতকে জীবিত করেন। আপনি কররবাসীকে পুনরায় জীবন দান করবেন। সুতরাং আমাকে কারও অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী করবেন না। আমি আপনার কাছে দুয়া করছি, আপনি আমার গাধা জীবিত করে দিন। এরপর সে গাধার কাছে গেল। গাধাকে উঠার জন্য একটি আঘাত করল। গাধাটি দাড়িয়ে কান ঝাড়তে শুরু করল। সে পুনরায় গাধায় তার সফরের পাথেয় উঠিয়ে যাত্রা করল। কিছুদূর গিয়ে তার সঙ্গীদের সাথে মিলিত হল। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করল,এটা কীভাবে হল? সে বলল,আল্লাহ তায়ালা আমার গাধা জীবিত করে দিয়েছেন। ইমাম শা’বী বলেন, আমি সেই গাধাটি কান্নাসা নামক বাজারে বিক্রি হতে দেখেছি।
তথ্যসূত্রঃ
*(ক.) আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খ.৬, পৃ.১৫৪
*(খ.) মান আশা বা’দাল মাউত,বর্ণনা নং ২৯।
*(খ.) দালাইলুন নুবুওয়াহ, খ.৬, পৃ.৪৯
এধরনের একটি ঘটনা ইবনে তাইমিয়া তার মাজমুয়াতুল ফাতাওয়াতে লিখেছেন।
ورجل من النخع كان له حمار فمات في الطريق فقال له أصحابه : هلم نتوزع متاعك على رحالنا، فقال لهم : أمهلوني هنيئة ، ثم توضأ فأحسن الوضوء وصلى ركعتين ودعا الله تعالى فأحيا حماره فحمل عليه متعاه .
অর্থ: নাখ’ এর অধিবাসী এক ব্যক্তির একটি গাধা ছিল। যাত্রাপথে গাধাটি মৃত্যুবরণ করে। তার সহযাত্রীরা বলল, আমরা তোমার মাল-সামানা ও পাথেয় আমাদের গাধাগুলোতে বন্টন করে নেই। সে তাদেরকে বলল। আমাকে কিছুক্ষণ সময় দাও। এরপর সে উত্তমরূপে ওজু করল। দু’রাকাত নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে দুয়া করল। আল্লাহ তায়ালা তার গাধা জীবিত করে দিলেন। এরপর সে গাধার উপর তার পাথেয় উঠালো।
[মাজমুউল ফাতাওয়া, খ.১১, ২৮১]
একই ধরনের একটি ঘটনা ইমাম শা’বী থেকে ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) তার আল-ইসাবা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ঘটনাটি হযরত উমর (রা:) এর সময় সংগঠিত হয়। এক্ষেত্রে শাইবান নামক এক ব্যক্তির গাধা মৃত্যুবরণ করলে পরবর্তীতে সে নামায আদায় করে দুয়া করে। আল্লাহ তায়ালা তার গাধাটি জীবিত করে দেন।
[আল-ইসাবা, খ.৩, পৃ.২২৭, বর্ণনা নং ৩৯৮৮]
আল্লামা আবু নুয়াইম নিজ সনদে ইয়াসার ইবনে হুবাইশ থেকে,তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন,
عن يسار بن حبيش عن أبيه قال أنا والذي لا إله إلا هو أدخلت ثابت البناني في لحده ومعي حميد ورجل غيره فلما سوينا عليه اللبن سقطت لبنه فإذا به يصلي في قبره فقلت للذي معي ألا تراه قال اسكت فلما سوينا عليه وفرغنا أتينا ابنته فقلنا لها ما كان عمل ثابت قال وما رأيتم فأخبرناها فقالت كان يقوم الليل خمسين سنة فإذا كان السحر قال في دعائه اللهم إن كنت أعطيت أحدا الصلاة في قبره فأعطينها فما كان الله ليرد ذلك الدعاء
অর্থ: একমাত্র ইলাহ আল্লাহ তায়ালার শপথ, আমি, হুমাইদ ও আরেক ব্যক্তি সাবেত আল-বুনানীকে দাফন করার উদ্দেশ্যে তার কবরে অবতরণ করি। আমরা যখন দাফন সমাধা করে কবরে ইট বিছিয়ে দিলাম। উপর থেকে একটি ইট সরে গেল। আমরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম যে সে কবরে নামায আদায় করছে। আমি আমার সঙ্গীকে বললাম, তুমি তাকে দেখছো? সে বলল, চুপ করো। আমরা সঠিকভাবে দাফন সম্পন্ন করে তার মেয়ের নিকট এলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সাবেতের আমল কী ছিল? আমরা যা দেখেছি, তার কাছে বলা হল। সে বলল, সে পঞ্চাশ বছর যাবৎ রাত জেগে নামায আদায় করতো। ফজর হলে সে দুয়া করতো, হে আল্লাহ, আপনি যদি কবরে কাউকে নামায পড়ার সুযোগ দেন, তাহলে আমাকে সেই সুযোগ দিন। সুতরাং আল্লাহ তার দুয়া প্রত্যাখ্যান করেননি।
তথ্যসূত্রঃ (ক.) আহওয়ালুল কুবুর, পৃ.৭০
*(খ.) শরহুস সুদুর,জালালুদ্দীন সুয়ূতী, পৃ.১৮৮ ।
*(গ.) মুখতাসারু সাফওয়াতিস সাফওয়া, খ.১, পৃ.২৯৬।
*(ঘ.) আহকামু তামান্নিল মাউত,পৃ.৪০, আব্দুল ওহাব নজদী।
ইমাম বাইহাকী হযরত সাইদ ইবনুল মুসাইয়্যাব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত উসমান এর সময় যায়েদ ইবনে খারিজা আল-আনসারী ইন্তেকাল করেন তাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি কথা বলে উঠেন। এবং বলেন,রাসূল(ﷺ) এঁর কথা পূর্ববতী আসমানী কিতাবে রয়েছে।আবু বকর সত্য বলেছেন। উমর সত্য বলেছেন। উসমান সত্য বলেছেন।
তথ্যসূত্রঃ (ক.) আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসীর ৬ষ্ট খন্ড,পৃ.২৯৩
*(খ.) দালাইলুন নুবুওয়াহ,ইমাম বাইহাকী, হাদীস নং ২৩০৫
*(গ.) আল-ইস্তেয়াব,ইবনে আব্দুল বার, বর্ণনা নং ৮৪৪ ।
*(ঘ.) ত্ববরানী ফিল কাবীর, বর্ণনা নং ৫১৪৪
*(ঘ.) তাহজীবুল কামাল।
*(ঙ.) আস-সিকাত,ইবনে হিব্বান
*(চ.) ইমাম আবু হাতিম,মাশাহিরু উলামায়িল আমসার।
ইবনে আব্দুল বার উক্ত ঘটনা বর্ণনায় লিখেছেন,
وهو الذي تكلم بعد الموت لا يختلفون في ذلك
যায়েদ ইবনে খারিজা যিনি মৃত্যুর পর কথা বলেছেন।এ ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ মতবিরোধ করেননি।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে সরল পথে অবিচল রাখুন। আমীন।