নবীকূলসম্রাট সাইয়িদূনা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, অন্যান্য আম্বীয়ায়ে কেরাম এবং আল্লাহ পাকের আউলিয়ায়ে কেরামের ওসিলার মাধমে আল্লাহর দরবারে দোয়া করা পবিত্র আমল।এর বৈধতা সম্পর্কে কুরআন-হাদীসে অসংখ্য দলীল রয়েছে এবং এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত রয়েছে। কিন্তু আহলুল বিদআহ একে শির্ক বলে। তারা তাদের দাবির স্বপক্ষে সহীহ বুখারীর এই হাদিস শরীফটি উপস্থাপন করেঃ
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্নিত,
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا. قَالَ فَيُسْقَوْنَ
দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু অনাবৃষ্টির সময় ‘আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ওয়াসীলাহ দিয়ে বৃষ্টির জন্য দু‘আ করতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ্! (আগে) আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওয়াসীলাহ দিয়ে দু‘আ করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চাচার ওয়াসীলাহ দিয়ে দু‘আ করছি, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। বর্ণনাকারী বলেন, দু‘আর সাথে সাথেই বৃষ্টি বর্ষিত হত [ তথ্যসূত্রঃ বুখারী : আস সহীহ, بَاب سُؤَالِ النَّاسِ الْإِمَامَ الِاسْتِسْقَاءَ إِذَا قَحَطُوا বাবু সুওয়ালিন নাসি ইমামিল ইসতিসকা, ২:২৭, হাদীস নং ১০১০ ]
জরুরী ভাষ্য নং ১: এই হাদীস শরীফের মাধ্যমে এ কথার দলীল দেওয়া যে ‘জীবিত’ দের ওসিলা দিয়ে দোয়া করা বৈধ এবং যারা পর্দা গ্রহন করেছেন তাদের ওসিলায় দোয়া করা অবৈধ, সম্পূর্ন অজ্ঞতা ও হাদীস শরীফের মনগড়া-বানোয়াট ব্যাখ্যা। এরুপ ব্যাখ্যা কোন সাহাবী, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ, ইমাম কিংবা হাদীস-বিশেষজ্ঞগণ করেন নি। ইমাম আল্ মালেকী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যে ব্যক্তি এই বর্ণনা থেকে এ কথা বুঝে নেয় যে হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে অসিলা করেছেন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অসিলা করেন নি, কেননা হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জীবিত এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মৃত’, তবে ওই ব্যক্তির উপলব্ধি ক্ষমতা-ই মৃত।” ইমাম সৈয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই ঘটনার পটভূমি বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেন:
وَفِيْ سَنَةِ سَبْعِ عَشَرَةَ زَادَ عُمَرُ فِيْ المَسْجِدِ النَّبْوِّيِ، وَفِيْهَا كَانَ الْقَحَطُ بِالْحِجَازِ، وَسُمِّيَ عَامُ الرَّمَادَةِ وَاسْتَقَىَ عُمَرُ لِلْنَّاسِ بِالْعَبَّاسِ. أَخْرَجَ ابْنُ سَعَدٍ، عَنْ نَيَارِ الأَسْلَمِيُّ: أَنَّ عُمَرَ لمَاَّ خَرَجَ يَسْتَسْقَي خَرَجَ وَعَلَيْهِ بَرْدُ الرَّسُوْلِ صَلَّىَ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَأَخْرَجَ عَنْ اِبْنِ عَوْنٍ قَالَ: أَخَذَ عُمَرُ بِيَدِ الْعَبَّاس ِثُمَّ رَفَعَهَا، وَقَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِ نَّبِيِّكَ أَنْ تَذْهَبَ عَنَّا المْحَلَ، وَأَنْ تَسْقِيْنَا الغَيْثَ، فَلَمْ يَبْرِحُوْا حَتَّى سَقُوا، فَأطَبَقَتِ السَّمَاءُ عَلَيْهِمْ أَيَّامًا.
– “১৭ হিজরী সালে হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে নব্বী সম্প্রসারণ করেন। ওই বছর হেজায অঞ্চলে খরা দেখা দেয়। সালটিকে ‘অঙ্গারের বছর’ আখ্যা দেয়া হয় (আম আল্ রামাদা)। হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মানুষের উপকারে বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনার সময় হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর অসিলা গ্রহণ করেন। হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি (সাহাবী) হযরত নিয়্যার আল্ আসলামী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন বৃষ্টির জন্যে খোদার দরবারে প্রার্থনা করতে বেরিয়ে আসেন, ওই সময় তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জুব্বা (বুরদ্) মোবারক পরেছিলেন। হযরত ইবনে আওন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে খলীফা উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা-এর হস্ত মোবারক ওপরে তুলে ধরেন এবং বলেন, ‘হে আল্লাহ্! আমরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানিত চাচার মধ্যস্থতায় (অসিলায়) আপনার দরবারে প্রার্থনা করছি যাতে আপনি এই খরা আমাদের কাছ থেকে দূর করে দেন এবং বৃষ্টি মঞ্জুর করেন।”[ তথ্যসূত্রঃ সুয়ূতি : তারিখুল খুলাফা, আল খলিফাতুস সানি উমর ইবনুল খাত্তাব, ১:১০৬ ]
প্রখ্যাত হাদীস-বিশেসজ্ঞ জি এফ হাদ্দাদ বলেন যে, এ ঘটনায় নিচের বিষয়গুলো পরিস্ফুট হয়:
(১) এই বর্ণনায় এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যে হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর যমানায় কখনোই বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাওয়াসসুল করা হয় নি। ওই ধরনের অভিমত কেউ নিয়ে থাকলে তা মনগড়া এবং সুস্পষ্ট দলিলের ওপর ভিত্তিশীল নয়।
(২) পক্ষান্তরে, হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওই সময়ই হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাওয়াসসুল করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যখন তিনি বৃষ্টির জন্যে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জুব্বা মোবারক পরে বেরিয়ে এসেছিলেন, যা হযরত ইবনে সা’দ বর্ণনা করেছেন। সহীহ্ মুসলিম শরীফ গ্রন্থে হযরত আসমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন যে তিনি তাঁর বোন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আলখেল্লাটি পেয়েছিলেন এবং তাঁরা সেটি দ্বারা মানুষের রোগ নিরাময় করার উপায় খুঁজতেন।
(৩) হুজুর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচার মধ্যস্থতা পরিস্ফুট করে যে তাওয়াসসুল মূলতঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই! কেননা, হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর গুরুত্ব কেবল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর (রক্তের) সম্পর্কের কারণেই হয়েছে, যা হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ভাষায় নিম্নরূপ:
“আপনার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা” (আল্ বুখারীতে উদ্ধৃত)। আল্ লালিকার সংস্করণে তা এভাবে উদ্ধৃত “আপনার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পর্কে হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মর্যাদা”। হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এ উপলক্ষে বলেন,
وَقَدْ بَيَّنَ الزُّبَيْرُ بْنُ بَكَّارٍ فِي الْأَنْسَابِ صِفَةَ مَا دَعَا بِهِ الْعَبَّاسُ فِي هَذِهِ الْوَاقِعَةِ وَالْوَقْتَ الَّذِي وَقَعَ فِيهِ ذَلِكَ فَأَخْرَجَ بِإِسْنَادٍ لَهُ أَنَّ الْعَبَّاسَ لَمَّا اسْتَسْقَى بِهِ عُمَرُ قَالَ اللَّهُمَّ إِنَّهُ لَمْ يَنْزِلْ بَلَاءٌ إِلَّا بِذَنْبٍ وَلَمْ يُكْشَفْ إِلَّا بِتَوْبَةٍ وَقَدْ تَوَجَّهَ الْقَوْمُ بِي إِلَيْكَ لِمَكَانِي مِنْ نَبِيِّكَ وَهَذِهِ أَيْدِينَا إِلَيْكَ بِالذُّنُوبِ وَنَوَاصِينَا إِلَيْكَ بِالتَّوْبَةِ فَاسْقِنَا الْغَيْثَ فَأَرْخَتِ السَّمَاءُ مِثْلَ الْجِبَالِ حَتَّى أَخْصَبَتِ الْأَرْضَ وَعَاشَ النَّاسُ وَأَخْرَجَ أَيْضًا مِنْ طَرِيقِ دَاوُدَ عَنْ عَطَاءٍ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ عَنِ بن عُمَرَ قَالَ اسْتَسْقَى عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عَامَ الرَّمَادَةِ بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَذَكَرَ الْحَدِيثَ وَفِيهِ فَخَطَبَ النَّاسَ عُمَرُ فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرَى لِلْعَبَّاسِ مَا يَرَى الْوَلَدُ لِلْوَالِدِ فَاقْتَدُوا أَيُّهَا النَّاسُ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي عَمِّهِ الْعَبَّاسِ وَاتَّخِذُوهُ وَسِيلَةً إِلَى اللَّهِ وَفِيهِ فَمَا بَرِحُوا حَتَّى سَقَاهُمُ اللَّهُ.
-“হে আল্লাহ্! কোনো শাস্তি-ই পাপ ছাড়া অবতীর্ণ হয় না, আর তা তওবা (অনুতপ্ত হওয়া) ছাড়া মোচন-ও হয় না। মানুষেরা আপনার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমার সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত আমার মর্যাদার ওয়াস্তে আপনার করুণাপ্রার্থী। আর এই হলো আমাদের হাত যা আপনার দরবারের দিকে তোলা; যদিও আমাদের অনেক পাপ, তবুও আমাদের কপালের উপরিবর্তী কেশগুচ্ছ অনুতপ্ত; অতএব, আমাদের বৃষ্টি দান করুন এবং আপনার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর চাচার সত্তায় অম্লান রাখুন।” অতঃপর আকাশ থেকে রশির মতো মোটা (অর্থাৎ ভারী) বর্ষণ আরম্ভ হলো এবং মানুষেরা হযরত আব্বাসের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কাছে এসে হাত বুলিয়ে দিয়ে বল্লো, “আপনাকে মোবারকবাদ (অভিনন্দন), মক্কা ও মদীনা (হারামাইন শরীফাইন)-এর সেচকারী।” হযরত উমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এমতাবস্থায় বলেন, “তিনি হলেন আল্লাহর কাছে মধ্যস্থতাকারী এবং নৈকট্যের মকাম (স্থান)।” এ বর্ণনাটি আল্ আনসাব পুস্তকে আল্ যুবায়ের ইবনে বক্কর রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে উদ্ধৃত করেছেন ইবনে হাজর রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘ফাত্হুল বারী’ গ্রন্থে [ ইবন হাজর আসকালানী : ফাতহুল বারী শরহু বুখারী, ২:৪৯৭ ]
অতএব, তাওয়াসসুল মুলতঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যস্থতায়ই হয়েছে, কেননা আল্লাহর নৈকট্য অন্বেষণকারী মানুষের জন্যে তিনি-ই হলেন চূড়ান্ত অসিলা, যা তিনি স্বয়ং জনৈক অন্ধ সাহাবীকে শিখিয়েছিলেন-
يَا مُحَمَّدُ ، إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي
“বলো, ইয়া মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)! ইন্নী আতাওয়াজ্জাহু বিকা ইলা রাব্বী – অর্থাৎ, হে রাসূল! আমি আপনার মধ্যস্থতায় আল্লাহর দিকে ফিরলাম।”
তথ্যসূত্রঃ ক. নাসায়ী : আস সুনানুল কুবরা, ৯:২৪৪ হাদীস নং ১০৪২০।
খ. ইবনে খুযামা : আস সহীহ, ২:২২৫ হাদীস নং ১২১৯।
গ. তিরমিযী : আস সুনান, ১৩:১২৪ হাদীস নং ৩৯২৭।
ঘ আহমদ : আল মুসনাদ, ৪:১৩৮, হাদীস নং ১৭২৭৯।
হাদীস-বিশেসজ্ঞ জি এফ হাদ্দাদ আরও লিখেছেন যে, অনেক সাহাবী থেকেই এ মর্মে স্পষ্ট বিবরণ বিদ্যমান যার কয়েকটি নিচে দেয়া হলো:
(ক) এক বেদুঈন আরব আমাদের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন,
جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ لَقَدْ أَتَيْنَاكَ وَمَا لَنَا بَعِيرٌ يُيَطُّ وَلَا صَبِيٌّ يَصِيحُ، وأنشده.
أَتَيْنَاكَ وَالْعَذْرَاءُ يَدْمَى لَبَانُهَا … وَقَدْ شُغِلَتْ أُمُّ الصَّبِيِّ عَنِ الطِّفْلِ
وَأَلْقَى بِكَفَّيْهِ الصَّبِيُّ اسْتِكَانَةً … مِنَ الْجُوعِ ضَعْفًا مَا يُمَرُّ وَلَا يُخْلِي
وَلَا شَيْءَ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ عِنْدَنَا … سِوَى الْحَنْظَلِ الْعَامِيِّ وَالْعِلْهِزِ الْفَسْلِ
وَلَيْسَ لَنَا إِلَّا إِلَيْكَ فِرَارُنَا … وَأَيْنَ فِرَارُ النَّاسِ إِلَّا إِلَى الرُّسْلِ
فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَجُرُّ رِدَاءَهُ حَتَّى صَعِدَ الْمِنْبَرَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، فَقَالَ: اللهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيثًا مَرِيئًا مَرِيعًا غَدَقًا، طَبَقًا عَاجِلًا غَيْرَ رَائِثٍ، نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ تَمْلَأُ بِهِ الضَّرْعَ وَتُنْبِتُ بِهِ الزَّرْعَ وَتُحْيِي بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَكَذَلِكَ تُخْرَجُونَ، فو الله مَا رَدَّ يَدَيْهِ إِلَى نَحْرِهِ حَتَّى أَلْقَتِ السَّمَاءُ بِأَبْرَاقِهَا، وَجَاءَ أَهْلُ الْبِطَانَةِ يَعْنِجُونَ يَا رَسُولَ اللهِ! الْغَرَقَ الْغَرَقَ، فَرَفَعَ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ ثُمَّ قَالَ:
اللهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا، فَانْجَابَ السَّحَابُ عَنِ الْمَدِينَةِ حَتَّى أَحْدَقَ بِهَا كَالْإِكْلِيلِ، فَضَحِكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ ثُمَّ قَالَ: لِلَّهِ دَرُّ أَبِي طَالِبٍ لَوْ كَانَ حَيًّا قَرَّتَا عَيْنَاهُ مَنْ يُنْشِدُنَا قَوْلَهُ؟ فَقَامَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ الله كأنك أردت:
وَأَبْيَضُ يُسْتَسْقَى الْغَمَامُ بِوَجْهِهِ … ثِمَالُ الْيَتَامَى عِصْمَةٌ لِلْأَرَامِلِ
يَلُوذُ بِهِ الْهُلَّالُ مِنْ آلِ هَاشِمٍ … فَهُمْ عِنْدَهُ فِي نِعْمَةٍ وَفَوَاضِلِ
كَذَبْتُمْ وبيت الله يبزي محمدا … وَلَمَّا نُقَاتِلْ دُونَهُ وَنُنَاضِلِ
وَنُسْلِمُهُ حَتَّى نُصَرَّعَ حَوْلَهُ … وَنَذْهَلُ عَنْ أَبْنَائِنَا وَالْحَلَائِلِ
-“আমরা এমন সময় আপনার শরণাপন্ন হয়েছি যখন আমাদের কুমারীদের (বুকের) দুধ শুকিয়ে গেছে, আর মায়েরা আপন শিশুর জীবনের চেয়ে নিজের জীবন সম্পর্কে বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ওই শিশু ক্ষুধায় হাত নামিয়ে স্থবির বসে আছে; কেননা এই ক্ষিদে জ্বালাময় এবং বিরামহীন। খাওয়ার মতো কিছুই আর আমাদের জনগোষ্ঠীর কাছে নেই, কেবল আছে তেতো শশা জাতীয় সবজি এবং রক্তমিশ্রিত উটের পশম। আমাদের আশ্রয় নেয়ার মতো আর কেউ নেই আপনি ছাড়া। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া মানুষেরা আর কোথায়ই বা আশ্রয় নেবে?”
এমতাবস্থায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁর জুব্বা মোবারক টানতে টানতে মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতঃপর আরয করলেন: “হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি মঞ্জুর করুন।” অমনি ভারী বর্ষণ আরম্ভ হলো। এ দেখে তিনি বল্লেন, “আবু তালিব (নবীর চাচা) আজ জীবিত থাকলে এ দৃশ্য দেখে নয়ন জুড়াতেন। ওই বেদুঈন (আবু তালেব) যা বলেছেন কে আছো তা পুনরায় আবৃত্তি করবে আমাদের উদ্দেশ্যে?” এই কথা শুনে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উঠে দাঁড়িয়ে আরয করলেন, “হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মনে হয় আপনি তাঁর এই কথা বোঝাচ্ছেন, “শুভ্র সেই সত্তা যার চেহারা মোবারক দ্বারা মেঘমালা কামনা করা হয়, যিনি এতিম অনাথদের লালন-পালনকারী ও বিধবাদের রক্ষক। তাঁরই মধ্যস্থতায় হাশেম গোত্র দুর্যোগ থেকে আশ্রয় চায়; কেননা তারা তাঁরই মধ্যে খুঁজে পায় মহা অনুগ্রহ ও করুণা…..।”
তথ্যসূত্রঃ ক ফাতহুল বারী : শরহু বুখারী, ৫:১২৭।
খ . বায়হাকী : দালায়িলুন নবুওয়াত, ৬:১৪১।
গ. ইবনে কাছির : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৬:৯৯
হাদীস-বিশেসজ্ঞ জি এফ হাদ্দাদ এর সম্পূর্ন লেখাটি পাওয়া যাবে http://www.livingislam.org ওয়েবসাইটে।
জরুরী ভাষ্য নং ২: হযরত সাওয়াদ ইবনে কারীব আল্ সাদুসী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কবিতার আকারে আবৃত্তি করেন-
فَمُرْنَا بِمَا يَأْتِيكَ يَا خَيْرَ مَنْ مَشَى … وَإِنْ كَانَ فِيمَا جَاءَ شَيْبُ الذَّوَائِبِ
وَكُنْ لِي شَفِيعًا يَوْمَ لَا ذِي شَفَاعَةٍ … سِوَاكَ بِمُغْنٍ عَنْ سَوَادِ بْنِ قَارِبِ
“সত্যি আপনি হলেন আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তিতে নবীদের মাঝে সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম’; মহানতম ও নির্মলতম পিতামাতার পুত্র সন্তান; অতএব, এই সাওয়াদ ইবনে কারীবের জন্যে ওই দিন সুপারিশকারী হোন, যেদিন সুপারিশকারীদের মধ্যে আপনি ছাড়া আর কারো সুপারিশই আমার জন্যে ন্যূনতম উপকারী হবে না।”
এ বক্তব্য শ্রবণে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃদু হাসলেন এবং বল্লেন, “সাওয়াদ! তুমি সাফল্য অর্জন করেছো।
তথ্যসূত্রঃ ক। আবু ইয়া’লা, ‘মু’জাম’, পৃষ্ঠা ২৬৫
খ। তাবারানী ‘আল্ কবীর’, ৭:৯৪, হাদীস নং ৬৪৭৫
গ। আবু নু’য়াইম, ‘দালাইল্ আল্ নুবুওয়া’, পৃষ্ঠা ১১৪, অধ্যায় ৬৩
ঘ। হাকিম, ‘মুস্তাদরাক’, ৩:৭০৫
ঙ। বায়হাকী, ‘দালাইল’, ২:২৫১),
চ। ইবনে আব্দিল বার, ‘ইস্তিয়াব’, ২:৬৭৫
ছ। ইবনে কাসীর, ‘তাফসীর’, ৪:১৬
জ। আল ‘বেদায়া’ ওয়ান নেহায়া
ঝ। ইবনে হাজর আসকালানী, ‘ফাত্হুল বারী’, ৭:১৮০ ও ‘ইসাবা’, ৩:২৯৯
জরুরী ভাষ্য নং ৩: প্রখ্যাত সাহাবী হযরত হাসসান বিন সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যাকে হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম সাহায্য করতেন, তিনি লিখেছেন যে,
يَا رُكْنُ مُعْتَمِدٌ وَعِصْمَةُ لَائِذٌ … وَمَلاَذُ مُنْتَجِعٌ وَجَارٌ مُجَاوَرٌ
يَا مَنْ تُخَيّْرُهُ الإِلَهُ لِخَلْقِهِ … فَحُبَّاهُ بِالخْلَقِ الزَّكِيِ الطَّاهِرِ
أَنْتُ النَّبِيُّ وَخَيْرُ عُصْبَةِ آَدَمَ … يَا مَنْ تُجَوِّدُ كَفَيْضِ بَحْرٌ زَاخِرٌ
-“আপনার প্রতি যাঁরা আস্থা রাখেন, ওহে তাঁদের ভিত্তিস্তম্ভ, ওহে তাঁদের আশ্রয়স্থল যাঁরা আপনার মাঝে আশ্রয় খোঁজেন, আর যাঁরা শষ্য ও বৃষ্টি খোঁজেন তাঁদের আশ্রয়দাতা, ওহে আশ্রয় অন্বেষণকারীদের প্রতিবেশী ও রক্ষাকারী, যাঁর মাঝে পূর্ণতা ও চারিত্রিক নির্মলতা সন্নিবেশ করে খোদাতা’লা তাঁর সৃষ্টিকুলের জন্যে মনোনীত করেছেন!”[ক। তথ্যসূত্রঃ ইবনে আব্দিল বার, ‘আল্ ইস্তিয়াব’, ১:২৭৬ খ। ইবনে সাইয়্যেদ আল্ নাস্, ‘মিনাহ্ আল্ মায’, পৃষ্ঠা ৭৩ ]
জরুরী ভাষ্য নং ৪: হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু অতীতে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যস্থতা (তাওয়াসসুল) গ্রহণ করেছিলেন, যে কারণে তিনি বলেছেন,
“আমরা ইতিপূর্বে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আপনার কাছে প্রার্থনার সময় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গ্রহণ করতাম . . . ।” অর্থাৎ, ওই সময় যখন হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফত আমল চলছিল এবং তাঁর খেলাফত আমলেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাওয়াসসুল হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু করেছিলেন; হুজর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের (প্রকাশ্য) জিন্দেগীর সময়ই কেবল তাওয়াসসুল করা হয়নি, বরং পরবর্তীকালেও তা করা হয়েছে, কেননা উক্ত দু’টি শাসনকালে, অর্থাৎ, সাড়ে আট বছরে তাঁরা আর কখনোই খরাপীড়িত না হওয়ার বিষয়টি অ-সম্ভাব্য। আল্ কাওসারী বলেন, “কিন্তু (হযরত উমরের) এই বাক্যটিকে রাসূলে আকরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর যাহেরী (প্রকাশ্য) জিন্দেগীতে সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা এমনই একটি ঘাটতি যা নিরর্থক মনের ইচ্ছা থেকে নিঃসৃত, রেওয়ায়াতের মূল বিষয়ের বিকৃতি সাধনের অপচেষ্টা এবং দলিল-প্রমাণ ছাড়া কল্পনাশ্রিত ব্যাখ্যামাত্র।”
অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম-ই হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যাহেরী জীবদ্দশার পরে তাঁর তাওয়াসসুল করেছেন যা আমাদের মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন ইমাম দারিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ‘সুনান’ গ্রন্থে, ভূমিকার ১৫ অধ্যায়ে (১:৪৩); এর শিরোনাম হলো “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তাঁর বেসালের (আল্লাহর সাথে মিলনপ্রাপ্তির) পর আল্লাহর অনুগ্রহ।” হাদীসের বিশারদ সকল আলেম এটিকে সহীহ্ বলেছেন । শায়খ নাবিল ইবনে হাশিম আল্ গামরী তাঁরই রচিত ১০ খণ্ড বিশিষ্ট দারিমী শরীফের ব্যাখ্যামূলক ‘ফাত্হুল মান্নান’ (১:৫৬৪-৬৬) গ্রন্থে একে সহীহ সাব্যস্ত করেছেন এবং নাসিরুদ্দিন আলবানীর মতো বিদআতীদের এই রেওয়ায়াতের প্রতি উত্থাপিত আপত্তিসমূহ খণ্ডন করেছেন।
জরুরী ভাষ্য নং ৫: হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর তাওয়াসসুল করে সমাজে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উঁচু পারিবারিক মর্যাদা মানুষদের সামনে তুলে ধরেছেন এবং তাদেরকে নবী বংশের প্রতি সম্মান প্রদর্শন শিক্ষা দিয়েছেন, যেমনিভাবে ইমাম ইবনে হাজর রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত আলোচ্য রেওয়ায়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন: “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয়স্বজন ও বযুর্গানে দ্বীনের শাফায়াত বা সুপারিশ প্রার্থনা করা একান্ত কাম্য; আর এই ঘটনা হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মাহাত্ম্য ও উচ্চ মকাম এবং হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুরও মাহাত্ম্য প্রতিভাত করে, যেহেতু তিনি হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র প্রতি বিনয়ী হয়েছিলেন এবং তাঁর হক্ক তথা অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।” ‘ইমাম আহমদ একে সমর্থন করেছেন অপর এক বর্ণনা দ্বারা,
أَنَّ كَعْبًا الْحَبْرَ أَخَذَ بِيَدِ الْعَبَّاسِ فَقَالَ: «اخْتَبِئْهَا لِلشَّفَاعَةِ عِنْدَكَ» قَالَ: وَهَلْ لِي شَفَاعَةٌ؟ قَالَ: نَعَمْ «لَيْسَ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا كَانَتْ لَهُ شَفَاعَةٌ» .
হযরত কা’আব আল্ আহবার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাত মোবারক নিজ হাতে নিয়ে তাঁকে বলেছিলেন, “আমি এই করমর্দন লুকিয়ে রাখবো আমার পক্ষে আপনার সুপারিশের (শাফায়াতের) জন্যে।” হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উত্তর দেন, “কেন, আমি কি শাফায়াত করতে পারবো (অর্থাৎ, শাফায়াতের ক্ষমতা আমার থাকবে কি না?” কা’আব উত্তর দিলেন, “ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহল তথা ঘরের মানুষ বা পরিবার সদস্যদের এমন কেউই হবেন না যাঁর শাফায়াতের ক্ষমতা থাকবে না!” কা’আব আল্ আহবার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত উমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে আরও বলেন, “বনী ইসরাইল গোত্রের মানুষেরা যখনই খরাপীড়িত হতো, তখনই তারা তাদের নবী (মূসা আলাইহিস্ সালাম)-এর পরিবার সদস্যদের সুপারিশ কামনা করতো।” [ ইমাম আহমদ, ফাযাইল আল্ সাহাবা, ২:৯৩৭, হাদীস নং ১৮০২ ]।
জরুরী ভাষ্য নং ৬: এই ঘটনা কেবল নবীকূলসম্রাট রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বা হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর দোয়া করা নয় বরং এই শাফায়াত ছিল তাঁদের যাত বা সত্তা মোবারক এবং দোয়ার মাধ্যমে ।
وَقَالَ عُمَرُ بْنُ حَمْزَةَ حَدَّثَنَا سَالِمٌ عَنْ أَبِيهِ رُبَّمَا ذَكَرْتُ قَوْلَ الشَّاعِرِ وَأَنَا أَنْظُرُ إِلَى وَجْهِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَسْتَسْقِي فَمَا يَنْزِلُ حَتَّى يَجِيشَ كُلُّ مِيزَابٍ
وَأَبْيَضَ يُسْتَسْقَى الْغَمَامُ بِوَجْهِهِ ثِمَالُ الْيَتَامَى عِصْمَةٌ لِلْأَرَامِلِ
وَهُوَ قَوْلُ أَبِي طَالِبٍ
সালিমের পিতা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বৃষ্টির জন্য দু‘আরত অবস্থায় আমি তাঁর পবিত্র চেহারার দিকে তাকালাম এবং কবির এ কবিতাটি আমার মনে পড়লো। আর তাঁর (মিম্বার হতে) নামতে না নামতেই প্রবলবেগে মীযাব হতে পানি প্রবাহিত হতে দেখলাম।
তিনি শুভ্র, তাঁর চেহারার অসীলাহ দিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করা হতো।
তিনি ইয়াতীমদের খাবার পরিবেশনকারী আর বিধবাদের তত্ত্বাবধায়ক।
আর এটা হলো আবূ তালিবের বাণী কবিতা ।
[ তথ্যসূত্রঃ সহীহ বুখারী, بَاب سُؤَالِ النَّاسِ الْإِمَامَ الِاسْتِسْقَاءَ إِذَا قَحَطُواপরিচ্ছেদঃ অনাবৃষ্টির সময় ইমামের নিকট বৃষ্টির জন্য লোকদের দু‘আর আবেদন, তাওহীদ প্রকাশনী, হাদীস নং ২০০৯, আধুনিক প্রকাশনী, ৯৪৯ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৫৪]
জরুরী ভাষ্য নং ৭: সৌদি সালাফী রাজতন্ত্রের দরবারী লেখক মোহ্সিন খান বোখারী শরীফ (৩২:৬৫)-এর অনুবাদে হাদীসের শব্দ পরিবর্তন করে দিয়েছেন এবং মনগড়া শব্দ ব্যবহার করে লিখেছেন, ‘একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি যাঁকে বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা করতে অনুরোধ করা হয়েছিল।’ এখানে ‘যাঁর চেহারা মোবারক দ্বারা মেঘমালা কামনা করা হয়’ – বাক্যটি পরিবর্তিত হয়েছে। আল্লাহ পাকের লানাত এই গুস্তাখদের উপর।
জরুরী ভাষ্য নং ৮: হযরত উমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ভাষ্যানুযায়ী হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর যাত মোবারকের মাধ্যমে শাফায়াত প্রার্থনা:
فَخَطَبَ عُمَرُ النَّاسَ فَقَالَ: أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرَى لِلْعَبَّاسِ مَا يَرَى الْوَلَدُ لِلْوَالِدِ، وَيُعَظِّمُهُ وَيُفَخِّمُهُ فَاقْتَدُوا أَيُّهَا النَّاسُ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي عَمِّهِ الْعَبَّاسِ وَاتَّخِذُوهُ وَسِيلَةً إِلَى اللَّهِ فِيمَا نَزَلَ بِكُمْ
“ওহে মানুষেরা! রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতার মতো বিবেচনা করতেন; তাঁকে সম্মান করতেন এবং তাঁর অধিকারকেও। অতএব, ওহে মানুষেরা, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচার সত্তা মোবারকের আকৃতিতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুম মান্য করো এবং হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে তোমাদের এই দুর্যোগের সময় মহাপরাক্রমশালী খোদা তা’লার দরবারে প্রার্থনাকালে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গ্রহণ করো!” জি এফ হাদ্দাদ বলেন যে, এই বর্ণনাটি হযরত উমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে আল্ বালাযিরী নির্ভরযোগ্য সনদে লিপিবদ্ধ করেছেন। এটি দুর্বল সনদে ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন আল্ যুবায়র ইবনে বাক্কার নিজ ’আল্ ‘আনসাব’ পুস্তকে এবং ইবনে আসাকির তাঁর ‘তারিখে দিমাশক্’ গ্রন্থে (৮:৯৩২), যা ইমাম ইবনে হাজর রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত ‘ফাত্হ’ পুস্তকে উদ্ধৃত হয়েছে (১৯৫৯ সংস্করণ, ২:৪৯৭)। শায়খ মাহমুদ মামদুহ্ তাঁর ‘রাফ’আল মিনারা’ (১২০ পৃষ্ঠা) গ্রন্থে আল্ আলবানীর ‘তাওয়াসসুল’ পুস্তকে উত্থাপিত দাবির খন্ডন করেছেন এই মর্মে যে, ওই পুস্তকের ৬৭-৬৮ পৃষ্ঠায় আলোচ্য রেওয়ায়াতটিকে ‘মুদতারিব’ বা তালগোল পাকানো বলাটা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় [ তথ্যসূত্রঃ http://www.livingislam.org ]
আল্লাহ পাক খারিজী বিদআতীদের ফিতনা থেকে মুসলিম উম্মাহকে নিরাপদ রাখুন! আমীন! আসস্বলাতু ওয়াস সালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ!