আল্লাহ পাকের নামে শুরু যিনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক । সালাত ও সালাম নবীকূলসম্রাট সাইয়িদূনা মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।
কিছু লোক আলা হাযরাতকে আলা হাযরাত বলে ডাকাকে অবোইধ বলেন। তাদের যুক্তি হলো যে আপনারা রসূল পাককে ডাকেন হযরত মুহাম্মাদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে ! আপনারা প্রথম খলিফার নামের আগে কেবল হযরত লাগিয়ে বলেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক, আপনারা দ্বিতীয় খলিফার নামের আগে কেবল হযরত লাগিয়ে বলেন হযরত উমর ফারুক , আপনারা তৃতীয় খলিফার নামের আগে কেবল হযরত লাগিয়ে বলেন হযরত উসমান গনী, আপনারা চতূর্থ খলিফার নামের আগে কেবল হযরত লাগিয়ে বলেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু অজহু অথচ আহমাদ রাযা খান ব্রেলভির নামের আগে লাগান “ আলা হাযরাত আহমাদ রাযা খান ব্রেলভি”। অর্থাৎ আপনারা চার খলিফা ও রসূল পাকের চেয়েও আহমাদ রাযা খান ব্রেলভিকে অধিক সম্মান করেন। কারণ আলা অর্থ হচ্ছে বড়। তাহলে “ আলা হাযরাত” অর্থ হলো হযরত মুহাম্মাদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেয়েও বড়।
এ যুক্তি সম্পূর্ন অজ্ঞতাপ্রসূত।এ কথা ঠিক যে আলা অর্থ হচ্ছে বড় আর ‘হাযরাত’ অর্থ হলো সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। সার্বিক ভাবে “ আলা হাযরাত” অর্থ হলো সম্মানিত ব্যক্তিত্ব বর্গের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি। উলেমায়ে ইসলাম শাইখ আহমাদ রাযা খান ব্রেলভিকে সমসাময়িক ইসলামিক স্কলারবর্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করতেন, তাই তাকে “ আলা হাযরাত” নামে ডাকতেন। তার অর্থ এই নয় যে তাকে চার খলিফা ও রসূল পাকের চেয়েও অধিক উত্তম মনে করেন। Abdur Rahim is the best boy in the class এর অর্থ এই নয় যে, আব্দুর রহীম দুনিয়ার সর্বকালের সব চেয়ে ভালো স্টুডেন্ট। এর অর্থ হলো আব্দুর রহিম একটি নির্দিস্ট স্কুলের নির্দিস্ট ক্লাসের ছাত্রদের মধ্যে সেরা ছাত্র। অনুরুপ “ আলা হাযরাত” বা “ সম্মানিত ব্যক্তিত্ববর্গের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি” দ্বরা দুনিয়ার সর্বকালের সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি মনে করা হয় না। বরং তাকে স্পেসিফিক সময়কালের সম্মানিত ব্যক্তিত্ববর্গের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি বলে সম্মান জানানো হয়। আশা করি, বিষয়টি সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর হয়েছে।
যদি তর্কের খাতিরে এক সেকেন্ডের জন্য উনাদের কথা মেনেও নি যে, আলা হাযরাত” দ্বরা শাইখ আহমাদ রাযা খান ব্রেলভিকে দুনিয়ার সর্বকালের সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি মনে করা হয়, তাহলে আমার এ বিষয়গুলি খানিক ভাবুনঃ
১। প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বলা হয় সিদ্দিকে আকবার বা সর্বশ্রেস্টহ সত্যবাদি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে শ্রেষ্ঠ সত্যবাদি তো হলেন রসূল পাক ! তাহলে মুসলিম উম্মাহ প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে সিদ্দিকে আকবার বলে কি অবৈধ কাজ করছে? মোটেও না! হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে মুসলিম উম্মাহ উম্মাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সত্যবাদি বলে সম্মান করে। উনাকে কখনোই রসূল পাকের চেয়ে শ্রেষ্ঠ সত্যবাদি বিবেচনা করা হয় না।
২। অনুরুপ ফারুকে আযম দ্বরা দ্বিতিয় খলিফা হযরত ওমরকে রসূল পাকের চেয়ে অধিক সম্মান করা হয় না।
৩। অনুরুপ ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলায়হ কে ইমামে আযম বলে ডেকে তাঁকে চার খলিফা বা রসূল পাক এর চেয়ে বড় বলে মনে করা হয় না।
৪। আপনারা ইবনে তাইমিয়াকে ডাকেন “শাইখুল ইসলাম” বলে। আক্ষরিক অর্থে এর দ্বারা কি ইবনে তাইমিয়াকে “শাইখুল ইসলাম” ডেকে চার খলিফা বা রসূল পাক এর চেয়ে বড় বলে মনে করা হলো না ? এরুপ হাজারো দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে।
যারা আলা হাযরতকে আলা হাযরত নামে ডাকা অবৈধ বলে ফতোয়া দিচ্ছেন অথচ আকাবিররা নিজেদের পীরকে ডেকেছেন “আলা হাযরত” নামে। দেখুন, আপনাদের সামনে রয়েছে দেওবান্দী তাবলিগ জামাআতের বিখ্যাত গ্রন্থ “তাযকেরাতুর রাশিদ” । খন্ড নং ১, পৃষ্ঠা নং ৫০। এই গ্রন্থে হাযী এমদাদুল্লাহ মুহাযিরে মাক্কি রাহমাতুল্লাহি আলায়হিকে কেবল পৃষ্ঠা নং ৫০ এই “আলা হাযরত” নামে আট বার উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, তাজকেরাতুর রাশীদ কেতাবের প্রথম খন্ডের 40 পৃষ্ঠায় 5 স্থানে, 41 পৃষ্ঠায় 2 স্থানে, 42 পৃষ্ঠায় 7 স্থানে , 43 পৃষ্ঠায় 3 স্থানে 44 পৃষ্ঠায় 1 স্থানে, 45 পৃষ্ঠায় 3 স্থানে ,46 পৃষ্ঠার 6 স্থানে, 47 পৃষ্ঠায় 8 স্থানে, 48 পৃষ্ঠায় 9 স্থানে , 49 পৃষ্ঠায় 2 স্থানে , 51 পৃষ্ঠায় 5 স্থানে, 52 পৃষ্ঠায় 1 স্থানে , 53 পৃষ্ঠায় 6 স্থানে , 54 পৃষ্ঠায় 6 স্থানে ,55 পৃষ্ঠায় 2 স্থানে 56 পৃষ্ঠায় 1 স্থানে , 57 পৃষ্ঠায় 2 স্থানে , 59 পৃষ্ঠায় 1 স্থানে ,200 পৃষ্ঠায় 1 স্থানে,এবং উক্ত কেতাবের দ্বিতীয় খন্ডের 184 পৃষ্ঠায় 5 স্থানে, 185 পৃষ্ঠায় 3 স্থানে, 186 পৃষ্ঠায় 3 স্থানে , 187 পৃষ্ঠায় 3 স্থানে, 188 পৃষ্ঠায় 4 স্থানে , 189 পৃষ্ঠায় 1 স্থানে লিখেছে।
এক্ষেত্রে উনাদের সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? এছাড়া, মৌলবী আশরাফ আলী থানভীর নামের পূর্বে আপনাদের আকাবীর গণ আলেম গণ “হাকিমুল উম্মত” লিখেছেন ,মৌলবী কাসেম নানুতবীর নামের পূর্বে “কাসেমুল উলুম” লিখেছেন , মৌলবী রাশীদ আহমাদ গাঙ্গুহীর নামের পূর্বে ” ইমামে রব্বানী ” লিখেছেন । এই উপাধিগুলি যে সমস্ত লেখক গণ লিখেছেন তাদের সম্পর্কে শারয়ী হূকুম কী ?
আল্লাহ পাক মুসলিম উম্মাহকে সকল প্রকার ফিতনার হাত থেকে রক্ষা করুন! আমীন!