ইসলামের সোনালী যুগে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা -শরীফ জিয়ারত মুমিনবর্র্গের নিকট পরম কাঙ্খিত আমল বলে বিবেচিত হত। কিন্তু যেদিন থেকে তুরষ্কের উসমানিয়া খেলাফতের বিলপ্তি ঘটেছে এবং সোনার আরবে ইহুদি-খ্রীষ্টানদের এজেন্ট সাউদি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেদিন থেকে অপপ্রচার আরম্ভ হয়েছে যে, রওজা-শরীফ জিয়ারত হোল ব্যক্তি পূজা শির্ক। এই চিন্তাধারা সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, আউলিয়ায়ে কেরাম এবং উলেমায়ে ইসলামের অনুসৃত পথের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আল কুরআন এবং সহীহ হাদীসে রওজা জিয়ারতের সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে এবং মুসলিম উম্মাহ ১৪০০ বছর ধরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা-শরীফ জিয়ারত করে আসছেন। আল কুরআনে এমন কোন আয়াত নেই যেখানে উল্লেখিত রয়েছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা-শরীফ জিয়ারত করা নিষিদ্ধ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এমন কোন হাদীস নেই যেখানে নির্দেশিত আছে যে, রওজা-শরীফ জিয়ারত করা নিষিদ্ধ। প্রমান সংগ্রহের জন্য শীর্ষ স্থানীয় সকল খারিজী স্কলারদের লেখা পড়লাম। নাসিরুদ্দিন আলবানীর লেখা পড়লাম। বিন বাজের লেখা পড়লাম। উসাইমানের লেখা পড়লাম। বিলাল ফিলিপ্স এর লেখা পড়লাম। আইনল বারীর লেখা পড়লাম। কিন্তু এই মর্মে একটিও প্রমান পেলাম না।
বিদআতী খারিজী হাদীস অস্বীকার কারীরা রওজা শরীফ জিয়ারতকে অবৈধ প্রমানিত করার জন্য একটি কাজ নিখুঁত ভাবে করে গেছেন। তা হল, খারেজী সুলভ প্রোপাগান্ডা। তাদের এই প্রোপাগান্ডা ত্রি-মূখী। প্রথমত: সরল প্রাণ মুসলিমগণকে ব্যক্তিপূজার জুজু প্রদর্শন। এটা সম্পূর্ণ হাস্যকর এবং কুরআন-হাদীসের পরিপন্থী। দ্বিতীয়ত: একটি মূল্যবান হাদীসের বিকৃত এবং ভুল অর্থ প্রচার। হাদিসটি হল, ‘‘লা তাশাদ্দুর রিহাল ইল্লা ইলাস সালাসাতি মাসাজিদ।’ এই হাদিসানুযায়ী, তিন মসজিদ ব্যতীত (অধিক সওয়াবের উদ্দেশ্যে) নামাজ পাঠ করার জন্য অন্য কোন মসজিদ অভিমুখে সফর নিষিদ্ধ। কিন্তু খারিজী হাদীস – অস্বীকার কারীদের প্রোপাগান্ডা হল “One should take on religious journey to only three mosques : the sacred mosque, my mosque and Al-Aqsa Mosque” অর্থাৎ তিন মসজিদ অভিমুখেই কেবল ধর্মীয় সফর করা বৈধ (তথ্যসূত্র – হাজ, উমরাহ অ্যান্ড জিয়ারাহ ইন দা লাইট অফ কুরআন অ্যান্ড সুন্নাহ)। অথচ হাদীসের ‘টেক্সট’-এ ধর্মীয় শব্দটি ব্যবহৃতই হয়নি। সকল হাদীস বিশেষজ্ঞানগণ এই বিকৃতি নস্যাৎ করেছেন। তৃতীয়ত, রওজা শরীফ জিয়ারত সংক্রান্ত সকল হাদিস জাল বলে ঘৃন্য প্রোপাগান্ডা চালানো। ঈমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সমেত হাদীস বিশেষজ্ঞগণ না কি এই হাদীস শরীফ গুলিকে জাল বলে ঘোষণা করেছেন। (তথ্যসূত্র- হাজ উমরাহ জিয়ারাহ ইন দা লাইট অফ কুরআন অ্যান্ড সুন্নাহ)। লানাত খারিজী বিদআতীদের উপর। নির্জলা মিথ্যা বলতে এদের জিহ্বা কাঁপে না। ঈমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উপরিল্লিখিত হাদীস এবং রওজা শরীফ জিয়ারত সম্পর্কে লিখেছেন,
‘‘লা তাশাদ্দুর রেহাল বলতে কেবল মসজিদ বোঝানো হয়েছে এবং এর অর্থ হল নামাজ পাঠ করার উদ্দেশ্যে (অধিক সওয়াব অর্র্জনের জন্য) তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদ অভিমুখে সফর করা নিষিদ্ধ।” (তথ্যসূত্র- ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার আসককালানী, খন্ড নং ৩, পৃষ্ঠা নং ৬৫) ঈমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরও লিখেছেন, ‘‘এবং এর দ্বারা ঐ লোকদের দাবী নস্যাৎ হয়ে গেল যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবর শরীফ এবং অন্যান্য নেক বান্দাহগনের কবর অভিমুখে সফর করা নিষেধ।”(তথ্যসূত্র- ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার আসককালানী, খন্ড নং ৩, পৃষ্ঠা নং ৬৬)
আমি এই গ্রন্থে সংশিষ্ট হাদীস শরীফ সমূহ সর্ম্পকে গবেষকদের অভিমত সম্মনিত পাঠকদের সামনে ইন্-শা-আল্লাহ তুলে ধরব, যেন সম্মানিত পাঠকবর্গ উপলব্ধি করতে পারেন যে, ইমানের উৎস রিসালাত থেকে মুসলমানগণকে দূরে সরানোর লক্ষে সাম্রজ্যবাদী শক্তি, সাউদি রাজতন্ত্র এবং খারিজী বিদআতি অশুভ আঁতাত কি ভয়ঙ্কর ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। পরিস্থিতি এমন মর্মন্তিক জায়গায় গিয়ে পৌছেছে যে খারিজী বিদআতীরা বুখারী শরীফ এবং মুসলিম শরীফকেও অবিশ্বস্ত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ! ক্লাসিকাল হাদীস বিশেষজ্ঞদের অভিমত পরিবেশন করার পাশাপাশি খারিজী বিদয়াতীদের নিজেদের বরেন্য ঈমামদের স্বীকারোক্তি ও ইন-শা-আল্লাহ তুলে ধরব। সকলেই স্বীকার করেছেন যে রওজা শরীফ জিয়ারত একটি পবিত্র এবং বরকতময় কার্য।ইন-শা-আল্লাহ গ্রন্থখানি অধ্যয়ন করার পর সত্যানু সন্ধানীগণ সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন, কোন পথ অনুসরনীয় ? সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত এবং আউলিয়ায়ে কেরামের না কি পেট্রো-ডলারে লালিত কলমচিদের।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে খারিজী বিদআতীতের ফিৎনা থেকে নিরাপদ রাখুন। আমীন।