কিছু মানুষ যেমন এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, আইনুল হুদা প্রমুখরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে আ’লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলায়হ নাকি ফতোয়া প্রদান করেছেন যে সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে কেউ যদি ওলী বুযুর্গ মনে করে তাতে কোন বাধা নেই এবং এই ফতোয়ার দ্বারা নাকি প্রমাণিত হয় আ’লা হযরত সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে ভালো জানতেন। বিষয়টি ঠিক নয়। সৈয়দ আহমদ বেরলভী ছিলেন ওহাবী নজদী মতবাদের ভারতীয় প্রতিনিধী এবং আউর মোহাম্মদীয়া আন্দোলনের প্রধান হোতা। ফলে তাকে বুযুর্গ মানার প্রশ্নই আসেনা।
আসুন আমরা দেখে নিই আ’লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলায়হ সৈয়দ আহমদ বেরলভী সম্পর্কে প্রকৃতপক্ষে কি বলেছেন। ফতোয়ায়ে রেজভীয়ার ২৯ নং খন্ডের ২৩৬ পৃষ্ঠায় ৯১ নং ফতোয়ায় রয়েছে কয়েকটি প্রশ্নের জবাব। তন্মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো- বকর নামে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে চিশতিয়া তরিকার অনুসারী দাবি করে অথচ সৈয়দ আহমদ বেরলভী সম্পর্কে নিন্মোক্ত বিশ্বাস রাখে-
سید احمد رائے بریلوی کو نیک بزرگ بلکہ ولی خانتاہے۔ پس کیا فرماتے ہیں علمائے دین ایسے شخص کے حق میں کران کا اصل مذھب کیاہے؟
অর্থাৎ- সৈয়দ আহমদ রায় বেরলভীকে নেক বুযুর্গ এমনকি ওলী মনে করে। তাহলে উলামায়ে দ্বীন ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কি বলবেন। তার আসল মাযহাব কি?
আ’লা হযরত (রাঃ) এর উত্তরে লিখেছেন-
اگر صراط مستقیم کے کلمات باطلہ کو باطل کفریہ کو کفریہ۔ اسماعیل دہلوی کو گمرہ بددین جانتا ہے وہابیت سے جداہے۔ تو سید احمد کو صرف بزرگ جاننے سے وہابی نہ ہوگا۔
অর্থাৎ- সে যদি সিরাতে মুস্তাকিম কিতাবের বাতিল কথাকে বাতিল,কুফুরীকে কুফুরী,ইসমাইল দেহলভীকে গোমরাহ ও বদদ্বীন মনে করে ওহাবীয়াত থেকে পৃথক থাকে তাহলে সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে বুযুর্গ মনে করলে সে ওহাবী হবেনা
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা প্রতীয়মান হয়- প্রশ্নে উল্লেখিত বকর নামে ব্যক্তিটি একজন সুন্নী মুসলমান এবং চিশতিয়া তরিকার অনুসারী সে সিরাতে মুস্তাকিম কিতাবের বাতিল আকিদা মানেনা,ইসমাইল দেহলভীকে পথভ্রষ্ট মনে করে। ওহাবীয়তের সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই। কিন্তু সৈয়দ আহমদ বেরলভীর আকিদা বিশ্বাস কেমন ছিল সে সম্পর্কে সে পুরোপুরি অবহিত নয়। সৈয়দ আহমদ বেরলভীর লিখিত কোন কিতাবও নাই। সুতরাং হুসনে যন হিসেবে সে তাকে বুযুর্গ মনে করে। আর শুধুমাত্র এই কারণে বকরকে ওহাবী বলা যায়না। আর এটাও প্রমাণিত হয়না- আ’লা হযরত (রাঃ) সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে ভাল জানতেন বা বুযুর্গ বলার অনুমতি দান করেছেন? বরং আ’লা হযরত (রাঃ) তাকে মূর্খ,ওহাবীদের পীর ও বিভিন্ন ভাবে সমালোচনা করেছেন। নিম্নে সৈয়দ আহমদ বেরলভী সম্পর্কে আ’লা হযরত (রাঃ)র বক্তব্য তুলে ধরা হলো-
আ’লা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ইমাম আহমদ রেযা মুহাদ্দিসে বেরেলভী (রাঃ) তদীয় ফতােয়ায়ে রেজভীয়া- ১৪ তম খণ্ডে ৩৯৬ পৃষ্ঠায় সৈয়দ আহমদ বেরলভীর পরিচয় দিতে লিখেন-
بالآخر جاہ طلبے وملک گیری کے مشہور میں وسکھوں سے مشہور بہڑ اور عار فرار من الرجف کے بعد افغانوں کے موذی کش تلوار سے راہ فنا دیکھی علیہ ما عالیہ
)جب ہندی وہابیہ کے امام واسکے پیرکے موت ان کی سب یاوہ گویکوں اور پیشینگوئیوں کی مبطل ہوئی الخ-
ভাবার্থ:- আ’লা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত বলেন- সর্বশেষ কথা হলো- খ্যাতি অর্জন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়ার নেশায় শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার পর থেকে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে যুদ্ধ থেকে পলায়নের পথে আফগান মুসলমানদের বিষাক্ত তরবারীর আঘাতে তাদের সকল জল্পনা কল্পনার অবসান হয়ে গেল। অতঃপর লিখেন- যখন হিন্দুস্তানের ওহাবীদের নেতা (ইসমাইল দেহলভী) ও তার পীর সৈয়দ আহমদ বেরলভীর অকাল মৃত্যুতে তাদের সকল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে গেল।
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা মুহাদ্দিসে বেরেলভী (রাঃ) তদীয় ফতােয়ায়ে রেজভীয়া নামক কিতাবের ১৫ তম খণ্ডে ১৯৪ পৃষ্ঠায় সৈয়দ আহমদ বেরলভীর পরিচয় দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন-
غالبا اصل مقصود اپنے پیر رائے بریلے سید احمد کو کہ نواب امیر خان کے یہاں سواروں میں نوکر اور بیچارے نرے جاھل سادہ لوح تہے نبی بنایا تہا الخ۔
ভাবার্থ:- আর বাস্তবতা হলো- তাদের মূল উদ্দেশ্য তাদের পীর রায় বেরেলীর সৈয়দ আহমদকে যিনি নবাব আমীর খানের অশ্বারোহী কর্মচারী ছিল এবং বেচারা শুধুমাত্র মূর্খ ও সাধাসিধে লোক ছিল। তাকে (সৈয়দ আহমদকে) নবী বানানোর অপচেষ্টা ছিল।
আ’লা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত তদীয় ফতােয়ায়ে রেজভীয়া নামক কিতাবের ১৫ তম খণ্ডে ১৯৬ পৃষ্ঠায় সৈয়দ আহমদের পরিচয় দিতে গিয়ে আরো উল্লেখ করেন-
پیرجی کی مہر کاکندہ اسمہ احمد قرار پایا تہا- خطبوں میں پیرجی کے نام کے ساتہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم کہنا شروع ہوگیا تھا مگر قہر الٰہی سے مجبور ہیں غیبی کوڑےنے سب بنے کہیل بگاردئے پٹہانوں کے خنجور موذی کش نے پنے اور ما پچہاڑدئے جی کی جی ہی میں رہی بات نہ ہونے پائے وحی وعصمت کی کرامات نہ ہونے پائی-
ভাবার্থ:- পীরজীর সীল মোহরে ইসমে আহমদ তার নাম আহমদ অঙ্কিত ছিল। খুতবা সমূহের মধ্যে পীরজী সৈয়দ আহমদ বেরলভীর নামের পরে- (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলা শুরু হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আল্লাহর গজবে অপারগ হয়েছিল। আল্লাহর গায়েবী গজবে পতিত হয়ে তাদের সকল প্রকার পাতানো খেলা বিগড়িয়ে গিয়েছিল। পাঠানদের বিষাক্ত তরবারীর আঘাতে তাদের সকল পরিকল্পনা ছাইয়ে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। মুহূর্তের মধ্যে সকল কর্মকাণ্ড ব্যর্থতায় পরিণত হলো। ওহীর ও ইসমতের কেরামতীও আর বাকী থাকলোনা।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম,আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ইমাম আহমদ রেযা মুহাদ্দিসে বেরেলভী (রাঃ) সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে বুযুর্গ বলেননি। কারণ- যদি সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে বুযুর্গ মনে করতেন তাহলে সৈয়দ আহমদের মুখোশ উন্মোচন করে সরলমনা সুন্নী মুসলমানদেরকে সতর্ক করতেন না।
মোদ্দা কথা হলো, আ’লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলায়হ বলেছেন- যদি কোন ব্যক্তি ইসমাইল দেহলভীর লিখিত সিরাতে মুস্তাকিমের বাতিল ও কুফুরী আকিদাকে বাতিল ও কুফুরী বলে আকিদা রাখে সৈয়দ আহমদ বেরলভী মূর্খ ছিল,তাই তাকে শুধু বয়স্ক লোক হিসেবে বুযুর্গ মনে করে। শুধু এই কারণে উক্ত ব্যক্তিকে ওহাবী বলা যাবেনা কারণ সে ওহাবী আকিদা পোষণ করে না।