বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। সকল প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার । তিনি একমাত্র উপাস্য। তিনি একমাত্র প্রকৃত্ব সার্বভৌমত্বের অধিকারী । তিনি একমাত্র প্রকৃত সাহায্যকারী । তিনি একমাত্র প্রকৃত মালিক। অসংখ্য সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক নবীকূলসম্রাট দোজাহানের সর্দার হুযুর সাইয়িদূনা মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উপর এবং আল্লাহ পাকের দয়া ও শান্তি আরও বর্ষিত হোক পুত-পবিত্র আহলে বাইত এবং সাহাবায়ে কেরামের উপর। আসস্বলাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ !
সম্মানিত ভাইসকল, আজ আমরা নামাযের গুরুত্ব আলোচনা করব। এটি একটি তিক্ত সত্য বিষয় যে নামায এর গুরুত্ব আমরা সকলেই জানি কিন্তু নামাযের প্রতিই আমরা সবচেয়ে বেশি উদাসীন । উলেমায়ে কেরাম প্রায় প্রতিদিন নামাযের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। শুনতে শুনতে নামায সম্পর্কিত হাদিস গুলো আমাদের প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছে। অথচ আমরা নামায পাঠের ক্ষেত্রেই সব চ্যেয়ে বেশি ফাঁকি দিই। সম্মানিত ভাইসকল, ঈমান ও আকীদা বিশুদ্ধ করে নেওয়ার পর সকল ফরয সমূহের মধ্যে নামায কি সর্বাপেক্ষা বড়ো ফরয নয় ? নামায কি ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নয় ? নামায পরিত্যাগ করা কি কবীরা গুনাহ নয় ? নামাযকে ফরয বলে অস্বীকারকারী অথবা নামাযের অবমাননাকারী কি ইসলাম থেকে খারিজ নয় ? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে কেন নামাযের প্রতি আমাদের এত হিম-শীতল ও নির্মম উদাসীনতা ? ঝা চকচকে নয়নাভিরাম মসজিদ সমূহ কেন এরূপ নামাযী শূণ্য ? পঞ্চাশ, পঞ্চাশ একশ ওভারের এক দিবসীয় ক্রিকেট ম্যাচগুলো তো আমরা সাত ঘন্টা ধরে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি কিন্তু নামাযের জন্য দশটা মিনিট সময় আমরা বের করতে পারি না কেন ? ষোল-সতের রিলের হিন্দী সিনেমাগুলি তো আমরা আড়াই-তিন ঘন্টা ধরে এক নিঃশ্বাসে গিলি কিন্তু নামাযের জন্য খানিকক্ষণ মাত্র সময় আমরা বের করতে পারি না কেন ? গেমস খেলার জন্য বা কথিত নায়ক-নায়িকাদের নাচ-গান উপভোগ করার জন্য তো আমরা দামী মোবাইলের চওড়া রঙ্গীন স্ক্রীনে ঘন্টার পর ঘন্টা চেতনা-শূণ্য হয়ে মুখ ডুবিয়ে থাকি কিন্তু নামাযের জন্য কয়েকটা মিনিট মাত্র সময় আমরা বের করতে পারি না কেন ?
সম্মানিত ভাইসকল, আল্লাহ পাক কি বলেন নি যে, ‘‘এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখে।” {সুরা আনকাবুত, আয়াত ৪৫}। তাহলে নামাযের প্রতি এত উদাসীনতা কেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কি বলেন নি যে, ‘কেয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বান্দার সালাতের হিসাব হবে। যদি সালাত ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে (তিরমিযী)। তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কি বলেন নি যে, ‘‘ব্যক্তি ও কুফর-শিরকের মাঝে ব্যবধান হল সালাত ত্যাগ (মুসলীম)।” তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কি বলেন নি যে, ‘সালাতেই আমার চোখ জুড়ানো শীতলতা নিহিত (নাসাঈ)।’ তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকি বলেন নি যে, ‘যেকোনো মুসলমানের জন্য যখন ফরয সালাতের সময় উপস্থিত হয়, অত:পর সে সুন্দর ভাবে ওযু করে এবং সুন্দর ভাবে রুকু সাজদা করে, এতে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যদি সেকোনো কাবিরা গুনাহ না করে, আর এভাবে সর্বদা চলতে থাকে (মুসলিম)।” তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কি বলেন নি যে, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায ছেড়ে দেয়, জাহান্নামীদের তালিকায় তার নাম জাহান্নামের দরজায় লিপিবদ্ধ করে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে (আবু নুয়াইম)?” তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কি বলেন নি যে, ‘যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দেয় সে যেন তার পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দিল (তাবরানী)?” তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কি বলেন নি যে, ‘ফরজ নামায ইচ্ছাকৃত ভাবে ছেড়ে দিও না। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায ছেড়ে দেয় সে আল্লাহর জিম্মাদারী থেকে সরে পড়ে (ইবনে মাজাহ)।” তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন ?
সম্মানিত ভাইসকল, আমরা নিজেদেরকে আশিকে রসূল বলে দাবি করি। এই দাবি কি যথার্থ ? আসুন খানিক আত্ম-বিশ্লেষণ করি। কিছু লোক প্রচার করেন যে, কেবল মহানবীর নির্দেশ পালন করার নামই ইশকে রসূল। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, মহানবীর নির্র্দেশাবলীর প্রতি উদাসীন থেকে কেবল মিলাদ-কিয়াম-উরস-ফাতেহা করলেই ব্যাস হয়ে গেল! প্রকৃতপক্ষে, এই দুটি ধারণাই ভ্রান্ত। মহানবীর প্রতি প্রগাঢ়তম ও নিবিড়তম আন্তরিক টানও থাকতে হবে, মহা নবীর সীরাত এবং নির্দেশাবলীর অনুসরণও করতে হবে, অধিক হারে মহানবীকে স্মরণও করতে হবে, মহানবীর দীদারের জন্য লালায়িতও থাকতে হবে, মহানবীকে সর্বাধিক তাজীমও করতে হবে, মহানবী যাদের ভালো বাসতেন এবং ভালোবাসার নির্দেশ প্রদান করেছেন, অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত এবং আউলিয়ায়ে কেরামকে ভালোবাসতে এবং অনুসরণও করতে হবে, উম্মাতে মুহাম্মাদীর মঙ্গল কামনা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্টও থাকতে হবে, মহানবীকে সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র আকিদাও পোষণ করতে হবে। এত কিছুর সমষ্টিগত রূপ হল ইশকে রসূল। যেখানে কঠোর হাদীস রয়েছে যে, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক নামায ত্যাগ করে, সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের জিম্মা থেকে মুক্ত’ (এহইয়াউল উলুমুদ্দিন) সেখানে নামায পরিত্যাগ করে আমরা নিজেকে আশিকে রসূল বলে দাবি করি কোন মুখে ?
সম্মানিত ভাইসকল, নামায পরিত্যাগ কারীর শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে একবার ভেবে দেখুন। সুবিখ্যাত ‘জান্নাতী জেওর’গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে যে, যে ব্যক্তি নামায পড়বে না, সে ব্যক্তি বিরাট গোনাহগার হবে এবং জাহান্নামের আজাবের উপযুক্ত হবে। মুসলিম বাদশাহ তাকে সাবধান করবে এবং শাস্তি দিবে। এরপরেও যদি নামায না পড়ে তাহলে তাকে ততদিন পর্যন্ত বন্দী করে রাখবে যতদিন পর্যন্ত তওবা করে নামায পড়া আরম্ভ না করে। বরং ইমাম মালিক, ইমাম শাফিয়ী এবং ইমাম আহমাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এর নিকটে বাদশাহে ইসলাম তাকে কতল করার আদেশ প্রদান করবে। {জান্নাতী জেওর, আল্লামা আব্দুল মুস্তাফা আজমি, পৃষ্ঠা নং ৩৯}।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সুচারু রূপে নামায কায়েম করার তৌফিক্ব দান করুন। আমীন…।