بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد الانبياء والمرسلين وعلى اله واصحابه اجمعين
আল্লাহ রব্বুল আলামীনের দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। তিনি তাঁর এ অধম বান্দাকে তাঁর মাহবুব নবীকূলসম্রাট সাইয়িদূনা মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত রচনার কাজে হাত দেওয়ার তৌফিক দিয়েছেন। না বললেই নয়, নবীকূলসম্রাট এর সীরাত রচনা একটি দুরূহ কাজ। এতে হাত দেওয়ার আমি উপযুক্ত নই। এ বিষয়ে বলতে গেলে আমি একেবারেই অযোগ্য। তবু, আল্লাহ পাকের দয়ার উপর ভরসা করে নবীকূলসম্রাটের অধম গোলাম হিসেবে এই কঠিন কাজে হাত দিলাম। উদ্দেশ্য একটিই। নবীকূলসম্রাটের পুর্নাংগ সীরাত সহীহ দলীলের আলোকে তুলে ধরা এবং বাংলা সীরাত সাহিত্যে আল্লাহর হাবীবের সম্মানিত জাত-ব্যক্তিত্বের পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উভয় দিক যথাযথ সুষম ভাবে উপস্থাপিত হওয়ার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা বিরাজ করছে তা কিছুটা হলেও পূর্ন করা। স্মর্তব্য, নবীকূলসম্রাটের সীরাত একজন মুমিনের প্রথম পাঠশালা। তাই জীবনের রাজপথে পথচলার প্রাক্কালেই শিশুর জীবনকে সীরাতের রঙ্গে রঞ্জিত করে তুলা অপরিহার্য। শিশুর মন-মানসিকতা গঠনে ও ঘুমন্ত প্রতিভার বিকাশে সীরাত সদা সজীব । এই উজ্জীবনি শক্তি শিশুর মন-মস্তিস্কে সৃস্টি করে শক্তি, প্রেরণা ও গতি। তার ব্যক্তিত্বে প্রোথিত হয় সুউচ্চ মনোবল, অবিচল সৎসাহস ও নির্ভিকতা। নবীকূলসম্রাটের প্রতি তার ভালোবাসা ও আনুগত্য হয়ে ওঠে হিমাদ্রির মতো সুদৃঢ় আর সাগরের ন্যায় গভীর। সে বীরবিক্রমে পাড়ি দেয় আল্লাহর রাস্তায়। এখানে স্বীকার করতে সংকোচ নেই, আমার অপটু হাতের এই প্রচেষ্টার মুল্য নিঃসন্দেহে অকিঞ্চিতকর। তবু মনে বড় আশা … । বড় সাধ …….. । যদি আমার আক্বার কৃপাদৃস্টি মিলে যায় আর আল্লাহ পাক কৃপা করে তাঁর দয়ার ছায়ায় আমাকে আশ্রয় দিয়ে দেন ………।
বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় সীরাতে মুস্তাফার গুরুত্ব: বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় মুসলিম উম্মাহ এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ইসলাম নিখুঁত স্থাপত্যকলার ন্যায় এখনও সমান দীপ্তিমান । কিন্তু মুসলিম উম্মাহ পরিচয় সংকটে ভূগছে । একদিকে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধ্যাত্ব, অন্যদিকে বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলির ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইযেশনের অবিরাম প্রজ্ঞাপন। রাজনৈতিক ক্রুসেড এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাংস্কৃতিক ক্রুসেড, কলম-ক্রুসেড ও অর্থনৈতিক ক্রুসেড । লক্ষ তিনটি । প্রথমত, মুসলিম নবপ্রজন্মকে প্রথমে ধর্মসংযোগহীন বানানো। দ্বিতীয়ত, ক্রমে ক্রমে তাদেরকে ধর্মহীন বা মুরতাদ বানানো। তৃতীয়ত, ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে নির্মুল করা। কি লজ্জা কি লজ্জা ! আজ মুসলমানদেরকে অমুসলিমরা ইসলাম শেখায়! মানবতা আর শান্তির দারস দেয়! দোষ আমাদের। আমরা আমাদের শিকড় নবীকূলসম্রাট সাইয়িদূনা মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে থেকে বিচ্যুত হয়েছি। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, أَمْ لَمْ يَعْرِفُوا رَسُولَهُمْ فَهُمْ لَهُ مُنْكِرُونَঅর্থাৎ নাকি তারা নিজেদের রাসূলকে চিনতে পারেনি, তাই তারা তাকে অস্বীকার করছে? [ কানযুল ইমান, সূরা মুমিনুন, আয়াত নং ৬৯]। আমাদের নিকট আল কুরআনের দাবি হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চেনা। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানা। এটি ইমানী মুল্যবোধেরও দাবি। আল্লাহ রব্বুল আলামীন মুসলিমদেরকে কঠোর নির্দেশ প্রদান করেনঃ
قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
অনুবাদঃ আপনি বলুন, ‘যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ওই ব্যবসা-বাণিজ্য, যার ক্ষতি হবার তোমরা আশংকা করো এবং তোমাদের পছন্দের বাসস্থান এ সব বস্তু আল্লাহ্ ও তার রসূল এবং তার পথে যুদ্ধ করা অপেক্ষা তোমাদের নিকট প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা করো আল্লাহ্ তার নির্দেশ আনা পর্যন্ত। এবং আল্লাহ্ ফাসিক্বদেরকে সৎপথ প্রদান করে না। [ কানযুল ইমান, সূরা নং ৯, শুরা তাওবা, আয়াত নং ২৪]। কিন্তু বস্তুবাদী সভ্যতার দূষিত জীবানু আমাদের চিন্তা-চেতনাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। আমরা উইলিয়ম শেক্সপীয়ার, টমাস কারলাইল, মাইকেল এইচ হার্ট বা স্বামী বিবেকানন্দদেরকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিই কিন্তু টমাস কারলাইল যাকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম “হিরো” বলে বন্দনা করেছেন, মাইকেল এইচ হার্ট যাকে বিশ্বের সর্বকালের সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বলে বিশেষিত করেছেন এবং স্বামী বিবেকানন্দ যাকে পূজা করেন বলে স্তুতি গেয়েছেন সেই আল্লাহর রসূলকে আমরা জানার বা চেনার চেষ্টা করি নি। ব্রিটিশত্বের প্রতীক উইলিয়ম শেক্সপীয়ার কলম-ক্রুসেডের নিবেদিত সৈনিক হওয়া সত্বেও আজীবন প্রজ্ঞা ও মননের শিকড় খুঁজেছেন নবীকূলসম্রাটের পদমূলে। সাসেক্স ইউনিভার্সিটির ইংরেজী আর্লি মডার্ন স্টাডিজ এর অধ্যাপক Matthew Dimmock তুরস্কের TRT World কে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেন যে, “ Without Islam there would be no Shakespeare” [ তথ্যসূত্রঃ The centrality of the Muslim world to Shakespeare’s work, Nadia Khan, TRT World ]। উল্লেখ্য, উইলিয়ম শেক্সপীয়ার এর সময়ে ইংল্যান্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথ তুরস্কের সুলতান তৃতীয় মুরাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ও বানিজ্য মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন এবং ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির দ্বারা ইংরেজ সভ্যতা ও সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। অধ্যাপক Matthew Dimmock বলেন, “ “Without Tudor and Jacobean England’s rich and complex engagement with Islamic cultures, the plays written by William Shakespeare would be very different, if they existed at all” [ তথ্যসূত্রঃ The centrality of the Muslim world to Shakespeare’s work, Nadia Khan, TRT World ] ।