বর্তমান বস্তুবাদী সভ্যতার থিম হলো দুনিয়াপূজা আর মুখোশ। প্রত্যেকেই দুনিয়াপূজারী আর প্রত্যকেরই দ্বৈত সত্বা। কখনো মনে হয় আধুনিক সভ্যতা বুঝি মুখোশেরই নাম । সাবেক ইসলামী ওয়ার্ল্ড অর্ডার এর পুর্বে গ্রীক ও রোমান সভ্যতারও একই থিম ছিল। সেই ওয়ান এইম (aim), বস্তুগত অগ্রগতি। সেই ওয়ান বিজনেস (business), ইঁদুর দৌড়। সেই ওয়ান ডিজায়ার, পাওয়ার।(power)। মানুষ নাকি খুব উন্নত হয়েছে। নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার এর পতাকা বাহকরা একবারও বলেনা যে মানুষ কতটা ভালো মানুষ হয়েছে? উন্নতি তো হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির। যদি মানুষ এত উন্নত হতো তাহলে বিশ্বজুড়ে সততা, ন্যায় ও মানবীয় মূল্যবোধের মন্বন্তর কেন? কেন এত বুদ্ধিবৃত্তিক অস্থিরতা ?। মহান আধুনিক ইংরেজ কবি টি এস এলিয়ট খুব ভালো উত্তর দিয়েছেন যে, আমরা কফির চামচ দিয়ে নিজেদের জীবন পরিমাপ করছি । বস্তুবাদী আধুনিক সমাজ একটি নির্দয়, নির্মম ও হৃদয়হীন সভ্যতা। এটি এমন একটা সভ্যতা যা মানুষের সকল অনুভূতি ও সুকুমার বৃত্তিগুলিকে পণ্যে পরিণত করে । এ সভ্যতায় প্রেম ভালবাসা, মায়া মমতা, প্রীতি, বন্ধুত্ব কোন কিছুর মূল্য নেই। যা কিছু সুন্দর, যা কিছু সুকুমার সব কিছুকে পঙ্গু আর শুষ্ক করে তাকে পণ্যে পরিণত করে এই সভ্যতা।
আমরা পুর্বেই নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার এর কারিশমা ও অভিসন্ধি উল্লেখ করেছি। নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার এর সৌজন্যে বস্তুবাদ ও ভোগবাদ মুসলিম সমাজকে যথারীতি গ্রাস করেছে আর পরাজিত জাতির ন্যায় মুসলিমরা পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতির নিকট আত্মসমর্পন করেছে। ঔপনিবেশিক সুপার পাওয়াররা হাজার বছরের দীর্ঘ পরিকল্পিত প্রচেষ্টায় মসলমানদের হৃদয়ে প্রোথিত ঐ বিপ্লবী শক্তিকে সনাক্ত করেছে যার মাধ্যমে মুসলিম জাতি সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও কাফেরদের বিশ্বকে তের শত বছর ধরে কাঁপিয়ে এসেছে। তা হলো মহানবীর প্রতি তাদের তুলনাহীন আনুগত্য, সীমাহীন ভালোবাসা ও বেনজির শ্রদ্ধা। ঔপনিবেশিক শক্তি এই ইশকে রসূল বা গুলামীয়ে রসূল নামক বিপ্লবী শক্তিকে নির্মূল করার লক্ষে বিশ্ব ব্যবস্থাকে এমন রঙ্গীন ভাবে ঢেলে সাজিয়েছে যে আত্মবিস্মৃত আধুনিক মুসলিম উচ্ছ্বসিত কাকের মতো রাজহাঁসের অনুকরণ করতে গিয়ে তাদের পাতা ফাঁদে আটকিয়ে পড়েছে। বর্তমান মুসলিম সমাজ আত্মাহীন দেহের মতো। বর্তমান মুসলিমরা ইসলাম প্রদত্ত ধর্মীয় আদর্শ থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে। তারা ইসলামের ত্যাগের মানসিকতা ত্যাগ করে সংকীর্ণ মানসিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ইসলামের বিপ্লবী চেতনা ভূলে গিয়ে তারা কর্মবিমুখ জীবন বেছে নিয়েছে আর কর্মবিমুখতা হল সেই সাগর যা সকল গুনকে গিলে নেয়।
মুসলিমদের মৌলিক চিন্তাধারায় ঔপনিবেশিক শক্তি এতটাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে যে নতুন প্রজন্মের একটি অংশ ফিরিঙ্গিদের ক্ষমতার দাপট, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও সাদা চেহেরার সংগে দুর্দশাগ্রস্ত মুসলিম বিশ্বের তুলনা করে মুসলিমদের মুমূর্ষুতার জন্য ইসলামকেই দায়ী করছে। তারা ইসলামের কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছে এবং পশ্চিমা সমাজব্যবস্থা ও মূল্যবোধকে আঁকড়িয়ে ধরেছে । তাদের নিকট ঈমানী সত্য ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে বস্তুবাদ । পার্থিব জীবনে সর্বাঙ্গীণ উন্নতি হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের ধ্যান জ্ঞান। মুসলিমরা নিজেদের সৃষ্টিশীলতা হারিয়ে ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি, এমনকি তাদের সাংগঠনিক পদ্ধতি ও রাজনৈতিক ধারণার ‘ক্রেতায়’ রূপান্তরিত হয়েছে। মুসলিম সমাজের আকীদা-বিশ্বাস বিভ্রান্তিতে পরিণত হয়েছে এবং কর্মগুলো বিচ্ছিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই সন্ধিক্ষণে অনিবার্য প্রয়োজন হলো মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকতময় ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পুনরায় সম্পৃক্ত হওয়া। হুযুরকে যে যত অধিক জেনেছে সে তাকে তত অধিক ভালোবেসেছে, যত অধিক তাঁকে ভালোবেসেছে তত অধিক তাকে তাজীম করেছে, যত অধিক তাকে তাজীম করেছে তত অধিক তাকে অনুকরণ করেছে এবং অবশেষে নিজের সম্মান ও প্রানকে হুযুরের সম্মানের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছে। এই রসূল-প্রেম ও রসূল-আনুগত্যই ঈমানের মাধুর্যের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটায়।